শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জাগৃতি কার্যকরী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ শপথ গ্রহণ ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

পটুয়াখালীতে প্রতিদিনই বাড়ছে গোলপাতার রসের তৈরী গুড়ের কদর

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১৩৯ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা।মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে দেখা মিলল ৯৪ বছর বয়সি হোসেন আলী মুন্সির।তার বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে গোল গাছের সারি।

জানা গেল ব্রিটিশ আমল থেকেই গোল চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।গাছ থেকে আহরণ করেন গোলের রস।সে রস থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড়।খেজুর রস বা আখের রস থেকে গুড় উৎপাদনের খবর সবার জানা থাকলেও গোলের গুড় সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই।

কিন্তু সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে গোল পাতার গাছ থেকে গুড় তৈরি হওয়ার ব্যাপারটি বেশ পুরোনো।পটুয়াখালী বা এর আশপাশের অঞ্চলে এই গুড় বহুল পরিচিত।গোল গুড় তৈরির প্রক্রিয়া অনেকটা খেজুর গুড় তৈরির মতোই।ভাদ্র-আশ্বিন মাসে গোল গাছ পরিষ্কার করে ছড়া (গাছের যে অংশে ফল ধরে) নিচু করে বেঁধে দিতে হয়।

এরপর আরও দেড় মাস ছড়া প্রতিদিন ঘষে ঘষে আরও নিচু করে দিতে হয়।কারণ ছড়া যত নিচু হবে রস আহরণে তত সুবিধা।অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে রস আহরণের সুবিধার্থে টানা ৭-৮ দিন দিনে দুই বেলা করে ছড়া কেটে দিতে হয়। এরপর ছড়ায় রস আসতে শুরু করে।কেটে দেওয়া প্রতিটি ছড়ায় পাত্র বেঁধে দেওয়া হয়।এক একটি ছড়া থেকে আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত রস পাওয়া যায়।লবণাক্ত মাটিতে জন্মানো সত্ত্বেও গোল গাছের রস অন্য যেকোনো রসের চেয়ে বেশি ঘন আর মিষ্টি।

রোজ সকালে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন চাষিরা।বাড়িতে রস জ্বাল দেওয়া হয়।রস জ্বাল দেওয়া বিশেষ পাত্রের নাম ডোঙ্গা।সেই ডোঙ্গায় ৪-৫ কেজি রস জ্বাল দিলে এক কেজি গুড় পাওয়া যায়।

এই এলাকায় বর্ষীয়ান গুড় চাষিদের একজন হোসেন আলী মুন্সি।তিনি নামেও মুন্সি আর কাজেও রেখেছেন মুন্সিয়ানার ছাপ।তার কাছ থেকে জানা গেল,গোল চাষ করতে প্রচুর লবণাক্ত পানি লাগে।

পানি বেশি পেলে রস ভালো হয়।তার মতো অনেক বর্ষীয়ান গুড় চাষির হাত ধরেই গোল গুড়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।গুড় বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। তার দেখাদেখি তার ভাই, তার ছেলে-মেয়েরাসহ আশপাশের অনেকেই গুড় চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নিজের তৈরি করা গুড় নিয়ে কারিগর হোসেন আলী মুন্সি বলেন,‘আমাগো গুড়ে কোনো ভেজাল নাই। আগে বাজারে লইয়া যাইতাম, এহন বাড়ি আইয়া মাইনসে গুড় কিন্যা লইয়া যায়।

এ বছর ১৮০-২০০ টাকা দরে গুড় বেচতাছি। আমার ২০ কানি বাগান, যে রস পাই হেয়াতে প্রতিদিন ৫-৬ কেজি গুড় হয়। এইয়া দিয়াই সংসার চলে।’ গোল চাষের সীমাবদ্ধতা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন আলী মুন্সি বলেন, ‘আগে খাল গুলা ছাড়া আছেলে এহন জায়গায় জায়গায় বান দিয়া পানি চলাচল বন্ধ কইরা ফালাইছে।

অনেক জায়গায় খাল ভরাট হইয়া গেছে। ক্ষেতে ঠিকমতো পানি আয়ে না। হের লইগ্যা সেচ দেওয়া লাগে। সেচ দেতে অনেক খরচ হইয়া যায়। সরকার যদি এদিক নজর দেতে হেইলে আমাগো অনেক সুবিধা হইতো।

জানা যায়, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলার প্রায় ১০টি ইউনিয়নে হয় গোলের চাষ।বর্তমানে মিঠাগঞ্জে শতাধিক পরিবার গোল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।গোল গাছ থেকে শুধু রস বা গুড়ই নয়, গোলপাতা ঘরের ছাউনি বা বেড়া তৈরিতে লাগে। গোলপাতা বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন চাষিরা।

এ ছাড়া গোল ফল বা গাবনা তালের শাঁসের মতো খাওয়া যায় এবং এর অবশিষ্টাংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পানি প্রবাহ ঠিক রাখাসহ সরকারের তরফ থেকে বীজের সুবিধা পেলে এসব এলাকায় গোল চাষ আরও ত্বরান্বিত হবে।

একই এলাকার গোল গুড় উৎপাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে গুড় বানাই তাতে কোনো ভেজাল নাই। গুড় বানাইতে কোনো কেমিক্যাল দেই না।এই গুড়ের স্বাদ অন্য গুড়ের চেয়ে ভিন্ন। এই গুড়ের কারণে আমাগো এলাকায় অনেক মানুষ আসে। খাঁটি গুড়, এহন অনলাইনেই কাস্টমার বেশি।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গোল গাছ লবণাক্ত পানিতে হয়। তাই এই গুড় কিছুটা নোনা এবং খনিজ উপাদানে ভরপুর। গোল চাষ সম্প্রসারণে উপকূলীয় অঞ্চলে নদী তীরে ১০ লাখ চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।