মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
আজ মহান মে দিবস।শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবস। তবে মে দিবস কি তা জানে না নারী শ্রমিকেরা।অন্য দিনের মতো এ দিনেও নিয়মিত কাজ করে আসছেন তারা।তারপরেও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নারী শ্রমিকেরা তাদের প্রাপ্য ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।উপজেলার নারী শ্রমিকেরা ঘর গৃহস্থলির কাজের গন্ডি বেরিয়ে এখন জমিতে ধান চাষ,হাতে হাতুড়ি,মাথায় ঝুঁড়ি নিয়ে অভাব অনটন ক্ষুধা আর দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে চলেছেন।
ইট-পাথর ভাঙ্গা,মাটি কাটা,সিমেন্ট বালু মিশ্রণ,রাস্তাঘাট নির্মাণ ও চা- মিষ্টির দোকানে পানি টানার মতন কঠিন পরিশ্রম করেও ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব নারী শ্রমিকরা। উপজেলায় পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরা সমান তালে কাজ করছেন।বর্তমানে পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকের কদর অনেক বেশী হলেও বৈষম্যে থেকে তারা রেহাই পাচ্ছেন না।
নারী শ্রমিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে।উপজেলার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে সমপরিমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরির বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন নারী শ্রমিকরা।
একজন পুরুষ শ্রমিক প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করে যে পরিমান মজুরি পায়,কিন্তু একজন নারী শ্রমিক সমপরিমান শ্রম দিয়ে তার অর্ধেক মজুরি পায়।জানা গেছে, এ উপজেলায় কৃষি কাজে জড়িত রয়েছে অনেক নারী শ্রমিক।
নারী শ্রমিকরা ক্ষেতে ধান রোপণ,নিড়ানী দেওয়া,এমনকি ধান কাটা,মাড়াইয়ের কাজেও পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছেন।আর অল্প মজুরিতে বেশি কাজ পাওয়া যায় এবং নারীরা কাজে গাফলতি না করায় বিভিন্ন গ্রামে কৃষি ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের কদর ও চাহিদা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে একজন পুরুষ শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে ৫ থেকে ৬শ টাকা আর একই কাজে করে একজন নারী শ্রমের মজুরি পাচ্ছে ৩শ টাকা থেকে ৪শ টাকা।কৃষি কাজে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকরা এগিয়ে থাকলেও মজুরি বৈষম্যে তাঁরা আজও পিছিয়ে।
প্রতিবন্ধি বিধবা পুস্প জানায়,বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে দোকানে ৫ টাকা কলসী হিসেবে পানি টানার কাজ করে এক থেকে দেড়শ টাকা পাই।জীবন বাঁচানোর তাগিদে এবং একমাত্র ছেলের ক্ষুধা নিবারণের জন্য পানি টানার কাজ করছি।ইট-পাথর ভাঙ্গা মহিলা শ্রমিক কাকলী ঘরামী জানান, ঠিকাদাররা ইট-পাথর ভাঙ্গার জন্য প্রতিফুট হিসেবে টাকা দেয়।
এতে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩শ টাকার কাজ করা যায়।এত স্বল্প আয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা সম্ভব হয় না।তাই অর্থের অভোবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। স্থানীয় একাধিক এনজিও’তে কর্মরত মহিলা শ্রমিকরা জানান, তারা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ২৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকার বেশি রোজগার করতে পারেন না।দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে তাদের পারিশ্রমিকও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন নারী শ্রমিকরা।মে দিবসে নারী শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরী প্রাপ্তির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ঠদের দৃষ্টি কামনা করছেন।