নির্বাহী সম্পাদক আজহারুল ইসলামঃ
সমকাল অফিস থেকে বের হয়ে চ্যানেল আই ভবনে যাচ্ছিলাম। শত শত গাড়ি আটকে আছে সড়কে। ফুটপাতেও ভীড়, এরই মধ্যে পেছন থেকে আমার নাম ধরে কেউ একজন ডাক দিলেন। বুকটা যেনো কেমন করে উঠলো! এখানে তো কেউ আমাকে চেনার কথা না। ডাকটি কোথাও বাঁধাপ্রাপ্ত না হয়ে সরাসরি আমার কানে এসে ধাক্কা লাগে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি রিকশার হ্যান্ডেল হাতে মনির হোসেন পান খাচ্ছেন। কাছে এগিয়ে যেতেই জড়িয়ে ধরলেন মনির। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল, মনিরের ঘামের গন্ধ নাকে আসার সঙ্গে সঙ্গে আব্বার কথা মনে পড়ে গেলো আব্বার শরীরে ঘামের গন্ধও মনিরের ঘামের মতোই ছিল।
মনিরকে আমি চিনি, আমাদের পাশের গ্রামের মানুষ। তবে নামটা মনে করতে পারছিলাম না। তিনি নিজে থেকেই তার পরিচয় দিতে শুরু করলেন। এবার আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। বুকে বুক মিলিয়ে পুনরায় তার ঘামের গন্ধ নিলাম। বাড়ি থেকে গিয়ে ঢাকায় রিকশা চালান তিনি। আমার প্রতি তার দরদ ও ভালোবাসা দেখে আপ্লুত হয়ে পড়ছিলাম।
মনিরের সঙ্গে থাকা টাকাগুলো ঘামে ভিজে গেছে। ঘামে ভেজা কিছু টাকা বের করে আমাকে বললেন, এই নেও কিছু খাইয়া যাও’। আমার চোখ ভিজে উঠলো আহা দরদ ভালোবাসা! আব্বাও যখন বুক পকেট থেকে বের করে আমাকে টাকা দিতেন সে টাকাও এমন ভেজা থাকতো। খুব বিনয়ের সঙ্গে মনির ভাইয়ের টাকাটা হাতে নিলাম ঠিকই, কিন্তু আবার তাকেই সে টাকা ফিরিয়ে দিতে আমার বিবেক বাধ্য করলো।
মনির ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! ছলছল করে উঠছিল তার চোখ। এবার আমার পকেট থেকে বের করে মনির ভাইকে কিছু। কিন্তু নিতে চাইলেন না, মনির তার সমস্ত বিনয় ঢেলে দিয়ে ‘ না ‘ করছিলেন। খুব জোর করে তার হাতে দিলাম। যাক সে কথা। তার সঙ্গে আরও অনেক কথা হয় আমার। কেমন এক মায়ায় জড়িয়ে পড়ি।
বিদায় বেলায় মনির ভাই বললেন দেইখ্যা যাইয়ো কিন্তু ভাই! বাড়িতে আইলে দেহা করুমনি । আমি বারবার তার দিকে ফিরে তাকাই আর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন অপলক দৃষ্টিতে রিকশার হ্যান্ডেল তখনও তার হাতে।