খন্দকার মোঃ জসীম উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সমকালীন দুটি ঘটনা মানুষকে ভীষণ বিচলিত করেছে। একটি হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ-কাণ্ড। আরেকটি হলো হানিফ বাংলাদেশী নামক এক ব্যক্তি সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে প্রতীকী লাশ নিয়ে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে পদযাত্রা। কিন্তু দুটি ঘটনাই প্রশাসনযন্ত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনযন্ত্র ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী দেয়ালচিত্রের শিল্পীদের বহিষ্কার করেছে। অপর দিকে হানিফ বাংলাদেশীর প্রতিবাদকে রাজশাহীতে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন এমন করছে, কী জন্য করছে, কারা করছে, তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী কি না- এই নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, যারা ধর্ষিত হয়েছেন, সমাজ-জাতির গ্রহণ করে না। তারা আমার কন্যা। তারা আমার আপনজন। তাদের যদি পরিচয় কোনো সমস্যা হয়, তাহলে বাবা হিসেবে আমার নাম লিখে দিও এবং ৩২ নম্বরে ঠিকানা দিয়ে দিও। সেই সংগঠনের করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ছাত্রলীগের নেতারা যে জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, এটা পৃথিবীর সব ভভ্যতা-সভ্যতাকে হার মানিয়েছে। অপর দিকে এর প্রতিবাদে যারা চিত্রকর্ম এঁকে প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেছে। ছাত্রলীগের এক নেতাকে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে সেখানে ধর্ষণবিরোধী চিত্রকর্ম আঁকার প্রতিবাদ করতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এমনিতেই ঝাপসা হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ওপর প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে, যে জাতির স্থপতি নারীর ইজ্জত-সম্মানের ব্যাপারে কতটুকু শ্রদ্ধাবোধের সহিত বলেছেন, এই নারীদের পিতার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও। আর ঠিকানার জায়গায় ৩২ নম্বর লিখে দাও। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রায় মুছে যাওয়া প্রতিকৃতি ওপরে এ ধরনের চিত্র এঁকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পেয়েছে। যারা এ কাজ করেছেন, তারা ভালো কাজ করেছেন। কারণ, জাতির স্থপতির দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা তো ধর্ষক হতে পারে না। তাই এ ধরনের প্রতিবাদে তাঁরা আত্মা শান্তি পেয়েছে। কিন্তু একজন ছাত্রনেতা কীভাবে প্রতিবাদী চিত্রকর্ম আঁকিদের বহিষ্কারের জন্য অনশন করলেন। অপর দিকে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ যারা চিত্রকর্ম এঁকেছেন, তাদের বহিষ্কার করেছে। এ ঘটনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কারণ, এখানে দলকে বা ছাত্রসংগঠনকে মহিমান্বিত করা হয়নি। এখানে একটি ব্যাপার পরিষ্কার, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ধর্ষক এবং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর মুছে যাওয়া প্রতিকৃতিকে সুকৌশলের সামনে এনেছে। এটা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু তথা শেখ হাসিনার জন্য সম্মানের নয়, অপমানের কারণ। এরা কীভাবে এত জঘন্য একটা অপকর্মকে ঢাকার জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে ব্যবহার করেছে।
অপর দিকে ভারত প্রতিনিয়ত সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আজ ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনযন্ত্র বিব্রত এসব রোহিঙ্গাকে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ঠান্ডা মস্তিষ্কের না হতেন, তাহলে যেকোনো সময় মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ লেগে যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি এবং নায়কোচিত নেতৃত্বের কারণে মিয়ানমার বারবার উসকানি দেওয়ার পরেও নেত্রী শক্ত হাতে তা হ্যান্ডেল করেছেন। কোনোভাবেই বাংলাদেশের প্রশাসনযন্ত্রকে এই অপকর্মের ফাঁদে পা দিতে দেননি। মিয়ানমার পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ ভারত ও চীনের সাথে যুদ্ধ লাগার কোনো আশঙ্কায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ নামক একটা উদীয়মান রাষ্ট্রের সাথে উসকানি দিয়ে যুদ্ধে জড়ানোর যে পাঁয়তারা করেছিল, শেখ হাসিনা তা কোনোভাবেই হতে দেননি। পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। সেখানে হানিফ বাংলাদেশীর এ ধরনের প্রতিবাদ যুক্তিসংগত। যেটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু তাকে এই প্রতীকী আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনযন্ত্র কীভাবে বাধা দিচ্ছে, তা এককথায় ন্যক্কারজনক। অপর দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণবিরোধী ছাত্রদের প্রতিবাদের ভাষা চিত্রাংকন, সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনযন্ত্র যে আচরণ করে তাদের বহিষ্কার করেছে, তা ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু তথা শেখ হাসিনার জন্য অবমাননাকর। বিষয়গুলোর দিকে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দেবেন বলে আশা রাখি।