বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জাগৃতি কার্যকরী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ শপথ গ্রহণ ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

বরিশালের বাকেরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জমিদার বাড়িটি অস্তিত্ব সংকটে

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৫৪ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী নাটু বাবুর জমিদার বাড়ি।১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর এই বাড়িটি ও জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্যাম্প।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ যুদ্ধ শুরুর পর বরিশাল অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছিল জমিদার বাড়িটি।এখানে বসেই মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা করা হতো।

জানা যায়,১৬শ শতকের দিকে এ জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রসন্ন কুমার রায় চৌধুরী।১৯ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত জমিদারির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন তাদের পঞ্চম বংশধর কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী (নাটু বাবু)। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর একজন জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি (নাটু বাবু) নিজ গ্রাম শ্যামপুরে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। জমিদার হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে সকল প্রকার সহায়তা করেছেন জমিদারি কোষাগার থেকে।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা নাটু বাবু বেশিদিন বাঁচতে পারেননি।স্বাধীনতার মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১৯৭৩ সালে তাকে হত্যা করে স্থানীয় রাজাকার হাশেম আলী ও তার সহযোগীরা।

যুদ্ধকালীন সময়ে ১৫ নভেম্বর স্থানীয় রাজাকারদের সাথে নিয়ে ওই বাড়িটিতে আক্রমণ চালায় পাকবাহিনী। সেইদিন সম্মুখ যুদ্ধে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ২১ জন পাক সেনা নিহত হয়।

ওই যুদ্ধে ৩৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল নরপিচাশ পাকবাহিনীর সদস্যরা।নাটু বাবুর স্ত্রী ছায়া রায় চৌধুরী জানান, ১৯৭৩ সালে তার স্বামীকে হত্যার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেছেন।

ওইসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাটু বাবুর হত্যার বিচারে আশ্বাস দিয়েছিলেন।পাশাপাশি তার সাথে থাকা পাঁচ মাস বয়সের শিশু পুত্র বিপ্লবকে বঙ্গবন্ধু কোলে তুলে নিয়ে নাটু বাবুর চার সন্তানের ভরন পোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

জাতির পিতার এমন সহায়তার আশ্বাস পেলেও তা বেশিদিন টিকে থাকেনি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর আবারও অন্ধকার নেমে আসে জমিদার পরিবারে।

ছায়া রায় চৌধুরী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে স্বাধীনতা বিরোধীরা। এরপর থেকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে নাটু বাবুর পরিবারকে।যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান রয়েছে।

সেই পরিবারটি স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে আজও নিগৃত।জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ পরিবর্তন নিয়ে দেখা দেয় নানান রকম প্রতিবন্ধকতা।

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টিতে ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিদ্যালয়টির নাম ফলক উন্মোচন হয়।বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার নব্বই বছর পরে শহিদ কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী নাটু বাবু মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে নামকরন করা হয়েছে।

একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পরবর্তী আদৌ সংরক্ষিত হয়নি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত তাদের এই জমিদার বাড়িটি।বরং কালের সাক্ষী হয়ে থাকা তাদের (জমিদার পরিবারের) বাড়িটি দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের সহযোগীরা এমন অভিযোগ রয়েছে।

অযত্নে অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে জমিদারবাড়ি।৬ দশমিক ৬৯ একর জমির ওপর গড়ে তোলা বাড়িটির মূল দোতলা ভবনটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।বাড়িতে ঢোকার মূল ফটকেরও একই অবস্থা।

মূল দোতলা ভবনটিতে বাস করছেন কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরীর স্ত্রী ছায়া রায় চৌধুরী। বাড়ির ভেতরে বড় একটি দিঘি, একটি পুকুর ও বাগান আছে।

এই পরিবারের জমির ওপর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়,শ্যামপুর বাজার, মসজিদ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি সংরক্ষণ করার দাবি জানান,কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী নাটু বাবুর পরিবার সহ বাকেরগঞ্জবাসি।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।