মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
বরিশাল নগরের বান্দ রোড এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে আবির ইসলাম ওরফে জিহাদ নামের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।এ ঘটনায় শিশুটির মা মরিয়ম বেগম ও সৎবাবা মিলন হাওলাদারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।মিলন নগরের বটতলা চৌমাথা এলাকার শফিক হাওলাদারের ছেলে।
গতকাল রোববার(৩০ এপ্রিল) দুপুরে নগরের রূপাতলী এলাকায় শিশুটির মামার বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ধারণা,সৎবাবার মারধরে ওই শিশুটি মারা গেছে।তবে সৎবাবার দাবি,শিশুটিকে সকালে ‘হোটেল বায়জিদ’ নামের ওই হোটেল থেকে নাশতা খাওয়াতে নেওয়ার সময় দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়।হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বরিশাল নগরের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা আল আমিন শিশুটির আপন বাবা।অভিযুক্ত মিলন হাওলাদারের দাবি, আল আমিনের স্ত্রী মরিয়মকে কয়েক মাস আগে তিনি বিবাহ করেছেন।ছেলে আবির মায়ের সঙ্গেই থাকত।
হোটেল বায়জিদের ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান বলেন,মিলন হাওলাদার ও মরিয়ম বেগম স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তিন দিন আগে তাঁদের হোটেলে ওঠেন।সঙ্গে একটি বাচ্চা ছিল।হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে জানিয়ে তাঁরা হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন।কক্ষ ভাড়া নেওয়ার কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে রোগী দেখতে যাচ্ছেন বলে তাঁরা বেরিয়ে যান।এরপর আর ফিরে আসেননি।তবে শিশুটি সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে কি না, সেটা তাঁরা কেউ দেখেননি বলে তিনি জানান।
এদিকে শিশু আবিরের মৃত্যুর পর মিলন হাওলাদার ও মরিয়ম বেগম দুপুরের দিকে শিশুটির লাশ নিয়ে নগরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন মাওলানা ভাসানী সড়কে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে যান।পেশায় রিকশাচালক আনোয়ার নিহত শিশুটির মামা এবং মরিয়মের বড় ভাই।
অভিযুক্ত মিলন হাওলাদার বলেন, ‘আবির আমার সন্তান না হলেও আমি তাকে সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম।তাকে আমি মারিনি|নাশতা খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোটেলের দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক ভাবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।’ পুরো ঘটনা হোটেলের দ্বিতীয় তলায় থাকা সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড আছে বলে তিনি দাবি করেন।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরাফত রহমান বলেন,শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে,এটি হত্যাকাণ্ড।তিনি বলেন, শিশুটির মায়ের সঙ্গে মিলনের বিয়ে হয়েছে কি না,সেটা তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছেন,মৌখিকভাবে কালেমা পড়ে তাঁরা বিয়ে করেছেন।তাই পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।নিহত শিশুটির শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে।এ ঘটনায় অভিযুক্ত মিলন এবং মা মরিয়ম বেগমকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।