মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
বরিশালে যৌতুক না পেয়ে এক কিশোরী গৃহবধূকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের রুপাতলী হাউজিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন বলেন,ওপর থেকে পড়ায় ওই গৃহবধূর দুই পা ভেঙে হাড় বের হয়ে গেছে।এ ছাড়া মাথায়ও আঘাত পেয়েছেন তিনি।পা ভেঙে যাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালের নারী অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বর্তমানে।
এদিকে ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামী রাকিব হোসেন ও তাঁর মা বাবাকে হেফাজতে নিয়েছে।পুলিশের দাবি,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব দাম্পত্য কলহের কথা স্বীকার করলেও যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর মা জানান,তাঁর মেয়ে রুপাতলী এলাকার একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।সাত মাস আগে রুপাতলী ভাসানী সড়কের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক রাকিবের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন।মেয়ে নিখোঁজের পর থানায় তাঁরা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।পরে ছেলের বাবা বিয়ের বিষয়টি জানিয়ে মীমাংসা করেন।দুই মাস আগে মেয়েকে তাঁদের বাসায় দিয়ে যান রাকিব।তখন দুই লাখ টাকার আসবাব দিয়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর কথা বলেন। কিন্তু এত টাকা দিয়ে আসবাব পত্র কেনার সামর্থ্য না থাকায় মেয়েকে স্বামীর কাছে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কয়েক দিন আগে মেয়ে আবার স্বামীর বাসায় পালিয়ে যান।এরপর তাঁরা মেয়ের কোনো খোঁজ নেননি।
ওই গৃহবধূর মা বলেন,গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এক ব্যক্তি ফোন করে তাঁকে হাসপাতালে যেতে বলেন।তাঁরা হাসপাতালে আসার পর মেয়ে শুধু এতটুকুই বলেছেন, তাঁর স্বামী তাঁকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছেন।আর কিছুই জানেন না তিনি।
গৃহবধূর বাবা অভিযোগ করে বলেন, যৌতুকের দাবিতে জামাতা,শাশুড়ি ও ননদ তাঁর মেয়েকে খুব মারধর করতেন। কীভাবে,কত তলা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে,সেটা মেয়ে কিছুই বলতে পারেননি।ঘটনাস্থল রুপাতলী হাউজিংয়ের ওই ভবনে গিয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাননি।
এদিকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা প্রতিবেশী মো. নিজাম উদ্দীন বলেন,‘আমি বাইরে বের হওয়ার পর হঠাৎ ওপর থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ পাই।পরে দেখি,ভবনের সামনের রাস্তার ওপর কিছু পড়ে আছে।কাছে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ওই কিশোরীকে দেখতে পেয়ে ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) কল করে অ্যাম্বুলেন্স এনে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’ পাঁচতলা ওই ভবনের মালিক মো. মেহেদী বলেন, ‘আসলে আমরা বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানি না। কীভাবে ওই গৃহবধূ নিচে পড়লেন, কত তলা থেকে ফেলা হয়েছে,তা কিছুই বলতে পারছি না।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের নার্স তমালিকা হালদার বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে আনার পর তাঁর জ্ঞান ফিরেছিল।তখন তিনি জানান, স্বামী তাঁকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছেন। এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারেননি।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, মেয়েটি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আসলে কী ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে না। স্বজনেরাও পরিষ্কার কিছু জানাতে পারছেন না। তবে রাতেই মেয়েটির স্বামী,শ্বশুর ও শাশুড়িকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।