শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জাগৃতি কার্যকরী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ শপথ গ্রহণ ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

বরিশাল নগরীতে বেপরোয়া মোটরযান চালকরা,নিয়ন্ত্রণহীন হর্নে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১২৯ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

উচ্চ মাত্রার হর্ন ব্যবহার রোধে আইনে কড়াকড়ি থাকলেও বরিশাল নগরীতে তা উপেক্ষিত।এমনকি ট্রাফিক বক্স,পুলিশ চেকপোস্টের সামনে দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দ ব্যবহার করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।সচেতন মহল বলছেন,শব্দ দূষণ রোধ করা না গেলে বসবাসের উপযোগিতা হারাতে পারে বাংলার ভেনিসখ্যাত এই শহর

এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন,এক দশকের ব্যবধানে হৃদরোগ এবং শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।এর পেছনে শব্দ দূষণ অনেকাংশে দায়ী।যদিও স্থানীয় প্রশাসন দাবি করছে,উচ্চ শব্দ রোধে অভিযান চলছে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা জাতীয় মহাসড়কসহ নগরীতে প্রতিদিন ন্যূনতম ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট দপ্ততরের। যদিও এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই ট্রাফিক বিভাগ বা সিটি কর্পোরেশনের কাছে।নগরী প্রদক্ষিণ করা যানবাহন গুলোর মধ্যে কিছু মোটরসাইকেল,ট্রাক, প্রাইভেট কার ও বাস কারণে অকারণে দীর্ঘক্ষণ হর্ন বাজিয়ে থাকে। যানজটের মধ্যেও হর্ন বাজিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করে ভয়ংকর শব্দ তৈরি করে নগরী দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এক শ্রেণির বাইকার।খালি অ্যাম্বুলেন্স যত্রতত্র সাইরেন বাজায়।শুধু অ্যাম্বুলেন্স নয়,অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন মোটরসাইকেল, ট্রাক এবং প্রাইভেট কারে লাগিয়ে বাজানো হয়।এছাড়া অধিকাংশ মোটরযানে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করে। আবার বাইকচালকরা একসঙ্গে দলবেঁধে রাস্তায় প্রতিযোগিতায় নেমে বিকট শব্দে হর্ন বাজায়।তখন এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। কিন্তু প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

অভিযোগ আছে, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঝে-মাঝে পদক্ষেপ নিলেও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে হাত বাড়ালেই এসব উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রাংশ কিনতে পারছে ব্যবহারকারীরা।

উচ্চ শব্দের এমন বেপরোয়া ব্যবহারে বিষিয়ে উঠছে নাগরিকদের জীবন। বিশেষ করে রূপাতলী থেকে সদর রোড, কাকলির মোড় থেকে জেলখানার মোড়, নথুল্লাবাদ থেকে জেলখানার মোড়, রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ, লঞ্চঘাট, পোর্টরোড, চৌমাথা থেকে বটতলা, জীবনানন্দ দাশ সড়ক, নথুল্লাবাদ থেকে গড়িয়ারপাড় এলাকায় উচ্চ শব্দ ব্যবহার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন, উচ্চ শব্দ অনেকের মৃত্যুরও কারণ।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২১ সালের জরিপের বরাত দিয়ে বলছে, নগরীতে শব্দ দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ ১৩১ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া গেছে। যদিও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, শব্দের স্বাভাবিক সহনীয়তা ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবেল। সেই মাত্রা ৬০ ডেসিবেল হলে মানুষ সাময়িক এবং ১০০ অতিক্রম করলে পুরোপুরি বধির হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, শব্দ ৯০ ডেসিমেল হলে উচ্চ রক্তচাপ ও কানের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগস্থলে আঘাত আসে। এই শব্দের মধ্যে যারা থাকে, তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে তরুণরা শখের বশে মোটরবাইকে যে বিকট শব্দের সাইলেন্সার-হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করে তা সাধারণত ৯০ ডেসিবেলের ওপরে। যা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম আর তালুকদার মুজীব জানিয়েছেন, শব্দ দূষণে শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের শব্দধারণ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো না। শিশুদের পাশে উচ্চ শব্দ করলে বধির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রনজিৎ খা বলেন, হৃদরোগজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের শব্দ দূষণ মারাত্মক ক্ষতি করে। শব্দ দূষণে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। শুধু মোটরসাইকেলই নয়, নগরজুড়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহন অপ্রয়োজনীয় ভাবে হর্ন বাজায়। এ কারণে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

সাগরদী এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা রয়েছে যেখান থেকে চলাচল করা অসম্ভব। নগরীতে পুলিশকে শুধু মোটরসাইকেলের কাগজ চেক করতে দেখি। শব্দ দূষণ করে যেসব গাড়ি সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখি না। আসলে বরিশাল শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। অন্যান্য দূষণের মতো শব্দ দূষণ মারাত্মক পর্যায় ধারণ করছে।

সদর রোডের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, দিন হলে দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। আমার ঘরে শিশু সন্তান আছে। উচ্চ শব্দে ঘুমের মধ্যেও আঁতকে ওঠে।

সিঅ্যান্ডবি ১ নং পুল এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝে কিছু অভিযান চালায়। কিন্তু হর্ন থামানোর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আর পরিবেশ অধিদপ্তরকে জীবনে কোনো দিন অভিযান চালাতে দেখিনি।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে দুই মাস ধরে অভিযান চলছে। সামনে যেগুলো পাচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে যেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না, সেই স্থান থেকে চালালে আমাদের কিছুই করার থাকে না।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, শব্দ দূষণ রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। প্রতি মাসে বিভিন্ন জেলায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী জেলায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আদালত এলাকা এবং বালিকা বিদ্যালয় স্কুল এলাকা নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।