মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলায় বাবাকে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে জলদস্যু নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে দুই ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের দুই ছেলে ও এক ছেলের স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (১০ এপ্রিল) ভোরে উপজেলার চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নের ভাসানচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৫০) ভাসানচর মিজিকান্দি এলাকার প্রয়াত সুবেদ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। নুরুল ইসলামের স্ত্রীর নাম তাছলিমা বেগম। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এ ঘটনায় আটককৃতরা হলেন- নুরুল ইসলামের বড় ছেলে মো. সুমন হাওলাদার, সুমনের স্ত্রী ও আরেক ছেলে মোহাম্মাদ আলী হাওলাদার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানদের পারিবারিক কলহ ছিল। প্রায় সময় তাদের বাড়িতে ছোটখাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হত। রোববারও (৯ এপ্রিল) স্ত্রী তাছলিমা বেগমের সঙ্গে নুর ইসলামের ঝগড়া হয়। তাছলিমাকে নুরুল ইসলাম মারধর করেন। তখন নুরুল ইসলামের ছেলেরা তাকে মারধর করার জন্য খোঁজাখুঁজি করছিলেন।
এ বিষয়ে নিহত নুরুল ইসলামের ছোট বোন হামিদা বেগম বলেন, কিছু হলেই আমার ভাবি ও ভাতিজারা আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তার ছেলেরা কেউ তেমন কোনো কাজ করত না। কয়েক দিন ধরে আমার ভাই একা জমির ধান কাটছিলেন। এ নিয়ে আমার ভাই ভাতিজাদের গালিগালাজ করেন। কিন্তু ভাবি ভাতিজাদের পক্ষ নিয়ে ভাইকে গালিগালাজ করেন। পরে ভাই-ভাবির মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন ভাই ভাবিকে মারধর করেন। এ ঘটনা শুনে তার ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভাইকে মারধর করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি আমার ভাই আমাকে জানিয়েছিল। শুনেছিলাম এ নিয়ে ভাই থানায়ও গিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, পরে আমার ভাই রাতে আমাকে মোবাইলে বলেছিল, বাড়িতে গেলে তার ছেলেরা তাকে মেরে ফেলবে। স্থানীয় মাতব্বরদের ভরসায় তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন। ভোরবেলা ছোট ভাতিজা সুজন কল করে জানাল তার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
নিহতের বোন হামিদা বেগম বলেন, আমার ভাই একজন কাঠমিস্ত্রি। সে কখনো মাছ ধরতেন না। তাকে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মাছ ধরার কথা বলা হচ্ছে। আমার ভাইকে আমার ভাতিজারা তাদের মামাদের সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
তবে নিহতের ছেলে সুমন হাওলাদার আটকের আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তার বাবা গতকাল রোববার গভীর রাতে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। ভোরে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় সংঘবদ্ধ জলদস্যুরা তার নৌকায় হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, মাছ ও জাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিলে জলদস্যুরা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তার বাবা নুরুল ইসলাম হাওলাদার মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে নদীতে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম এ কালাম প্রধান বলেন, ভোর সোয়া ৪টার দিকে নুরুল ইসলামকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না কীভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গজারিয়া সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান আল বলেন, সোমবার ভোরে হত্যার সংবাদ জানতে পারি। নিহতের মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে তার তিন ছেলে উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন বলছিলেন, সে তার বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেখানে কয়েকজন জলদস্যু তাদের কাছ থেকে মাছ এবং মাছ ধরার জাল ছিনিয়ে নিতে চায়। তার বাবা বাধা দিলে তাকে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অন্য একটি ঘটনাও জানতে পেরেছি। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে নাকি তাকে হত্যা করে মাছ ধরার ঘটনা সাজানো হচ্ছে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনায় নিহতের দুই ছেলে ও বড় ছেলের স্ত্রীকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এদের সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।