সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জাগৃতি কার্যকরী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ শপথ গ্রহণ ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ বার পঠিত

 এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রামঃ

বিগত ২০২৪ সালে ৬৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত, ১২৬০৮ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ৪৯৭ টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত, ৩১৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। এই সময়ে ২৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৭০ জন নিহত ও ৩১৫১ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.৬২ শতাংশ, নিহতের ৩০.০৮ শতাংশ ও আহতের ২৪.৯৯ শতাংশ। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯২৩৭ জন নিহত এবং ১৩১৯০ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ ০৪ জানুয়ারী শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে প্রতিবছরের ন্যায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪ সালে ৬৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত, ১২৬০৮ জন আহত হয়েছে। বিগত ১০ বছরে মোটরসাইকেল ১৫ লাখ থেকে ৬০ লাখে উন্নীত হওয়ায় নতুন করে ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় নামার পাশাপাশি ছোট যানবাহন অবাধে বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বাড়ছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১.৫৪ শতাংশ , নিহত ৭.৫০ শতাংশ এবং আহত ১৭.৭৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৬৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৯৫২ জন চালক, ১৮৭৯ জন পথচারী, ৬২২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৫৫ জন শিক্ষার্থী, ১২৬ জন শিক্ষক, ১২০৬ জন নারী, ৬৫৮ জন শিশু, ৪৮ জন সাংবাদিক, ১৭ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০১ চিত্রনায়ক, ০৬ জন আইনজীবী ও ১২ জন প্রকৌশলী এবং ২১৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে ৩৯ জন পুলিশ সদস্য, ২১ জন সেনা সদস্য, ০৫ জন আনসার সদস্য, ০১ র‌্যাব সদস্য, ০১ জন ফায়ারসার্ভিস সদস্য, ০১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য, ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২১ জন সাংবাদিক, ৭২৭ জন নারী, ৫৩৬ জন শিশু, ৪৩৪ জন শিক্ষার্থী, ৯৯ জন শিক্ষক, ১৩৭২ জন চালক, ২৬৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ০৮ জন প্রকৌশলী, ০৪ জন আইনজীবী, ১১৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ১৫ জন চিকিৎসক ও ১০০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছে। এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৯৭১৭টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৩.৪৫ শতাংশ বাস, ২৩.৩৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬.২১ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৫.৫৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২৭.৪৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬.৫৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৭.৩৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনা ভয়াবহ বাড়লেও এসব সংবাদ গণমাধ্যমে কম আসছে বলে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ২.০৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক, ১.৪৬ শতাংশ মোটরসাইকেল, ০.৩ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ০.১৮ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা, ০.১৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা সড়কে দুর্ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ১.৫৩ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ২.৮২ শতাংশ বাস সড়কে দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫০.৮৪ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা, ২৪.৩৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৪.৯৯ শতাংশ বিবিধ কারনে, ০.৩১ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁছিয়ে এবং ০.৭৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩৫.৬৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১.৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৫.৮১ শতাংশ ফিডার রোডে সংগঠিত হয়েছে। এছাড়াও দেশে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৯৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, ০.৭৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ও এসব যানবাহন অবাধে চলাচলের কারনে ফিডার রোডে ৭.৩১ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ০.৮১ শতাংশ, ০.০৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, রেলক্রসিং-এ ০.০৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এবার ঢাকা মহানগরীতে ১.৩৯ শতাংশ, আঞ্চলিক মহাসড়কে ৬.৭৫ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ : ১। বেপরোয়া গতি। ২। বিপদজনক অভারটেকিং। ৩। সড়কের নির্মাণ ত্রুটি। ৪। ফিটনেসবিহীন যানবাহন। ৫। চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা। ৬। চালকের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা। ৭। পরিবহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব। ৮। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার। ৯। মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো। ১০। অরক্ষিত রেলক্রসিং। ১১। রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা। ১২। ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্নীতি। ১৩। ট্রাফিক আইন অমান্য করা। ১৪। রোড মার্কিং না থাকা। ১৫। সড়কে চাঁদাবাজি। ১৬। রাস্তার উপর হাট-বাজার। ১৭। মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা। ১৮। চালকের নিয়োগ ও কর্মঘন্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা। ১৯। সড়কে আলোকসজ্জা না থাকা। ২০। রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু না থাকা। ২১। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর দ্বায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহি না থাকা। ২২। দেশব্যাপী নিরাপদ, আধুনিক ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারনে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী ভয়াবহভাবে বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা : ১. এত অধিক সংখ্যক মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অর্šÍভুক্ত করা। ২. দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা। ৩. সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্ধ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা। ৪. সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করা। ৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। ৬. গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ৭. সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্টা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা। ৮. গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। ৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করা। ১০. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া। ১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা। ১২. সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উচু করা। ১৩. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সাথে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রী সাধারনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার বদল হলেও পরিবহনের কাঠামোগত কোন পরিবর্তন আসেনি। চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে কেবল, ফিটনেসহীন যানবাহন সড়কে চলছে, আইনের অপপ্রয়োগ চলছে, বিআরটিএ রাজস্ব আদায়ে ব্যস্ত, ট্রাফিক বিভাগ জরিমানা আদায়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্তÍ, দুর্ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার যাবতীয় উপাদান সড়কে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল সভা-সমাবেশে, বক্তৃতা-বিবৃতি আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে দাবী করেন তিনি। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সমাজ উন্নয়ন কর্মী আবদুল্লাহ আল-জহির স্বপন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সদস্য ও দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের মোঃ জিয়াউল হক চৌধুরী প্রমুখ।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।