মো রাসেল সরকার গজারিয়া প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ঈদগাহের অদূরে সাতকাহনিয়া এলাকায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং এক বাক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ঘিরে এলাকাবাসীর জটলা। সামনে গিয়ে খবর নিয়ে জানা গেল বুধবার মধ্যরাতে তাদেরকে এখানে পিকআপ থেকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। তারা তিনজনেই শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ, অবস্থায় এমন দীর্ঘদিন ঠিকঠাক মত খাওয়া-দাওয়া হয়নি। বৃদ্ধের বয়স সত্তরের কোটায়, বৃদ্ধা মহিলার বয়স ষাটের কোঠায় আর অসুস্থ বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীর বয়স পচিশ বা ছাব্বিশ হতে পারে।
স্থানীয়দের দাবি, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওই বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা স্বামী স্ত্রী এবং বাক প্রতিবন্ধী তরুণী তাদের মেয়ে। তারা অসুস্থ হওয়ায় হয়তো ছেলে বা পরিবারের অন্য কোন সদস্য তাদেরকে রাতের আঁধারে এখানে রেখে পালিয়ে গেছে।
কাছে গিয়ে বৃদ্ধের কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি শুধু তার বাড়ি কুমিল্লা এটুকু বলেন। তার ছেলে তাকে এখানে ফেলে গিয়েছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন বড় ছেলে। এর বেশি তিনি কিছুই বলতে পারেননি। শারীরিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ব্রেন স্ট্রোক করে তার শরীরের একপাশ অবশ হয়ে গেছে। বৃদ্ধ মহিলার কাছে একই প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। তার অবস্থা দেখে মনে হয়েছে তিনি ভীষণ অসুস্থ। তার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, সকালে আমরা তাদেরকে এখানে পড়ে থাকতে দেখি। জায়গাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একেবারে কাছে। সম্ভবত রাতের কোন এক সময় তাদেরকে এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি এবং অসুস্থ বৃদ্ধকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল সৃষ্টি করেছে এলাকায় দলে দলে মহিলারা তাদেরকে দেখতে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আকলিমা বেগম বলেন, আমরা প্রথম যখন তাদেরকে দেখি তখন তাদের গায়ে তেমন কোন জামা কাপড় ছিল না। স্থানীয় লোকজন তাদের জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করে। ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক আমাদেরও বাবা-মা রয়েছে। আমরা তাদের সকালে এবং দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আকাশে মেঘ ডাকছে যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে এমন অবস্থায় তারা কোথায় যাবে। আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ মনসুর আলম বলেন, এরকম ঘটনায় আমাদের বিশেষ কিছু করার থাকে না তারপরও আমরা দেখছি আমাদের অবস্থান থেকে তাদেরকে আমরা কিভাবে সহায়তা করতে পারি।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমি আমার অবস্থান থেকে যথাসাধ্য তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো। এই মুহূর্তে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছি। আপাতত তারা হাসপাতালে থাকবে পরবর্তীতে আমরা অন্য চিন্তা করবো।