এম এ মান্নান ,মধ্যনগর(সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে তুলছে না কতৃপক্ষ। প্রশাসনের অবহেলার কারণে নামে মাত্র উপজেলা, কাজে নাই দাপ্তরিক কর্মচারী। প্রশাসনিক উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বৈষম্যের শিকার মধ্যনগরবাসী, দেশের সর্বশেষ ৩ টি উপজেলা ঘোষিত হয়েছে এক সাথে । এরমধ্যে একটি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা, জেলার সবচেয়ে অবহেলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদ মধ্যনগর। যার যোগাযোগ ব্যবস্থা,শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা সহ সকল আধুনিক ন্যূনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত এলাকার মানুষ। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই উপজেলা হিসেবে ঘোষনা করা হলেও প্রশাসনিক কার্যক্রমের তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। তিন বছরের অধিক সময় ধরে উপজেলার কার্যক্রম শুরু হলেও দাপ্তরিক সেবা পেতে এখনো পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলায় গিয়ে দিতে হয় ধন্না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ সহকারী কমিশনার ভূমির (এসিল্যান্ডের)পদ এখনো সৃজন হয়নি। উপজেলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ছয়জন ইউএনও যোগদানের আদেশ দিলেও দুই জন দায়িত্ব পালন করেন। অন্য দুই জন অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন । বাকী দুইজনই প্বার্শবর্তী ধর্মপাশা থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানেও ইউএনও পদটি শূন্য রয়েছে, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে দাঁড়াতে পাচ্ছে না প্রশাসনিক জনবল শূন্যতার কারনে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ দায়িত্বে থাকা উপজেলা কর্মকর্তা(ইউএনও)অতীশ দর্শী চাকমার বদলী হওয়ায় আবারো অতিরিক্ত দায়িত্বের গেঁড়াকলে পরেছে উপজেলাটি। ইউএনও না থাকায় এবং অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তার পদ শূন্য, এই উপজেলার মানুষ নানাভাবে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি, আর গুনতে হচ্ছে যাতায়াতের অতিরিক্ত খরচ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বদলি হওয়ার পরে পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলায় কর্মরত ইউএনও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার পরে এপর্যন্ত তিনি মাত্র একদিন মধ্যনগর অফিস করেছেন বলে জানাগেছে। ফলে সেবা পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের।
প্রশাসনসূত্রে জানাগেছে, এ উপজেলায় ২৩ টি দপ্তরের ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ১৮ জন। এর মধ্যে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা,সমাজসেবা কর্মকর্তা,নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও),প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা,পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে রয়েছেন। বাকিরা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে থাকা এসব দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ধর্মপাশা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন।ফলে তারাও মধ্যনগর নামে মাত্র অফিস করে বাকী সময় ধর্মপাশায় থাকেন।
অন্যদিকে উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা,মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা,উপজেলা প্রকৌশলী ,উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা,উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা,উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা,উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। জনবল সংকটে আর জোড়াতালি দিয়ে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকায় জনমনে উঠেছে নানান প্রশ্ন। এ কারণে স্থানীয়রা মনে করছে, এ যেন নামেই উপজেলা, কাজে নয়। অচিরেই এসকল দপ্তরের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়াসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি উপজেলাবাসীর।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মজনু বলেন,মধ্যনগর উপজেলা হলেও এখনো বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ধর্মপাশা যেতে হয়। পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে ইউএনও না থাকায় আমরা প্রশাসনিক কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চামরদানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.গোলাম জিলানী বলেন, জনবল সংকট ও ভবনের কারনে আমরা উপজেলার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে ও ভবন নির্মাণ করে এই সমস্যা নিরসন করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন,আমরা বিষয়টি উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত নবসৃষ্ট এই উপজেলায় ইউএনও নিয়োগ দেওয়া হবে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী বলেন,খুব দ্রুতই মধ্যনগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) নিয়োগ দেওয়া হবে।
এম এ মান্নান,
১৬.১০.২০২৪
০১৩১৮৩২৭২৮০