মির্জাপুর প্রতিনিধিঃ
সমাজবাসী, ভাই বোনের অস্বীকার থানায় মামলা
টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া এলাকায় একমাত্র ছোটবোন ও বউ-বাচ্চা নিয়ে বসবাস করে স্বপন মেল্লা (২৫)।সে ওই এলাকার মো. মালেক মোল্লার ছেলে। মা কয়েকবছর আগে পারি জমিয়েছে বিদেশে আর বাবা ব্যবসায়ীক কাজে ছুটে বেড়ান এদিক ওদিক।ছোটবোন স্বপ্না গ্রামের একটি কলেজে লেখাপড়া করে।গত ২৫ই এপ্রিল থেকে স্বপ্না নিখোঁজ। একপর্যায়ে স্বপ্নার ফোন আসে মামাতো বোন লাখির কাছে।অভিযোগ করে তার আপন বড় ভাই তাকে ধর্ষণ করেছে তাই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে আছে।এরকমটাই অভিযোগ সমাজবাসীর।
এ ঘটনা জানতে পেরে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে স্বপনকে আটক করে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করে। অভিযোগ আছে,স্বপন মাদকাসক্ত। সারাক্ষণ নেশায় বোধ হয়ে থাকে।
এদিকে ভাইয়ের নামে ভয়ে ধর্ষণের অভিযোগ দিয়ে স্বপ্না এখনো বাড়িছাড়া। প্রবাসী মায়ের দাবি স্বপ্নাকে এসব করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এমন ঘৃণিত অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকাবাসী স্বপনের নামে একটি গ্রাম্য সালিশ বসায়। এরপর তাকে সামাজিকভাবে একঘরে করে দেয়।
এদিকে অভিযুক্ত স্বপনের দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র।স্বপন আরো বলেন,যারা আমাকে ফাঁসিয়েছে তাদের সাথে আমাদের পারিবারিক ঝামেলা আছে।সালিশে আমাদের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজাহার মিয়া সহ সকলেই জোরপূর্বক আমার নিকট থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে।সেই শত্রুতার ধরে আমাকে এখানে ফাঁসানো হয়েছে।আমি কোর্টে মামলা করেছি।
ভুক্তভোগী স্বপ্না বলেন,মা দেশের বাহিরে থাকেন। ভাই-ভাবী-সন্তান ও বাবা বাড়িতে থাকেন।হঠাৎ করে ২৫শে এপ্রিল মঙ্গলবার কেউ বাড়িতে ছিল না।আমি ভোর বেলা বাহিরে বের হই।সেই সুযোগে এলাকার কিছু দুষ্কৃতকারী লোক ভোর বেলা আমার বাসায় এসে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করার চেষ্টা করে।মান ইজ্জতের ভয়ে ডাক চিৎকার করতে পারি নাই। পরে তারা চলে যায়।আমি সকাল বেলায় মান সম্মানের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। পরে শুনতে পারি যে,দুষ্কৃতকারীরা আমার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করে ও সমাজ বন্ধক দেয়।কল রেকর্ডের কথা বললে স্বপ্না বলেন,দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে একজন আমার মামাতো বোন লাখির দুলাভাই।লাখিরে এই ঘটনা বললে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে।পরে সে বলে আমি যা বলব তাই তোকে শুনতে হবে।না হলে সমস্যা হবে।পরে লাখি আমাকে বলে তুই তোর ভাইয়ের কথা বলবি যে,আমার ভাই আমাকে এরকম করেছে।পরে কোন উপায় না পেয়ে তার কথামত বলি আর লাখি তার রেকর্ড করে মানুষদের শেনায়।পরে কোন উপায় না পেয়ে কোর্টে মামলা করি।আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। যদি সুষ্ঠু বিচার না পাই তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
সমাজি ও মামলার আসামী আলী আকবর ও আ. রহিম বলেন,স্বপ্না লাখির কাছে কল করে বলেছে যে,স্বপ্নার ভাই ওকে ধর্ষণ করেছে।তাই আমরা সমাজবাসী মিলে ওর পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছি।স্বপ্না তারপর থেকেই পলাতক।ওর ভাই স্বপনকে কোন মারধর করা হয় নাই।স্বপনের মামারাই ওকে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়েছে।ওর নিকট থেকে কোন স্টাম্পে স্বাক্ষরও নেয়া হয় নাই।এসব মিথ্যা।আর স্বপ্না যে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাও মিথ্যা।ওর ভাই যে মামলা করেছে সেটাও মিথ্যা। কেন ওরা এই মামলা করেছে জানিনা।
স্বপ্নার মামাতো বোন লাখি বর্তমানে পলাতক আছে। তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার পরও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজাহারুল ইসলাম বলেন,অভিযোগ পেয়ে এলাকাবাসী যখন স্বপনকে আটক করে তারপর আমি তা জানতে পারি।পরে সেখানে উপস্থিত হই এবং জীবনে আর কখনো মাদক সেবন করবেনা এই মর্মে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে স্বপনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাতিবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন বলেন,ঘটনা শুনেছি। সত্য মিথ্যা জানিনা।কিছু মারধর করেছি শুনেছি,স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নিয়েছে শুনেছি কিন্তু দেখি নাই।যেহেতু কোর্টে মামলা হয়েছে, এখন আর আমাদের হাতে কিছুই নাই।
একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।বিষয়টি নিয়ে উক্ত এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।