মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার হাওর অঞ্চলের ৯৯% ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে, বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটেছে । এবছর বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে বৈশাখের সোনালী ফসল বোরোধান নিরাপদে কৃষকদের গুলায় তুলতে পেরেছে । এই অঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস একটি মাত্র ফসল বোরোধান। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে মাছের ভান্ডার হিসেবেও সাড়া দেশে পরিচিত ভাটির রাজধানী মধ্যনগর, আদিকাল থেকেই এসব এলাকার মানুষ ধান এবং মাছের উপর নির্ভরশীল, জীবন জীবিকার উন্নয়নে এবং পরিবারের সকল চাহিদা মেটাতে ধান চাষেই একমাত্র উৎপাদনের ক্ষেত্র।
সাড়া বছরের একটি মাত্র ফসলের উপর নির্ভর শীল ঐ অঞ্চলের প্রায় ৮০% ভাগ মানুষ। বিগত কয়েক বছর ধরে বোরো ধান চাষে কৃষকরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিকূলতার কবলে পরে, লাঞ্চিত হয়ে অনেক কৃষক সর্বহারা হয়েছে , ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা হয়ে, ঘর বাড়ি ছেড়েছে । এবছর প্রাকৃতিক কোন বাধা বিঘ্নি না থাকায়, সোনালী নতুন ধানের গন্ধের সমারোহে মুখরিত হয়েছে এলাকা জুড়ে। ধানের বাম্পার ফলনের ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে কাঙ্খিত হাসির ঝিলিক ।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় এবছর ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষক।
তবে উৎপাদিত জমিতে পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ কেউ দল বেঁধে কাস্তে দিয়ে কাটছেন ধান। কেউবা ধান কাটার যন্ত্র (কম্বাইন-হারভেস্টার) দিয়ে, একই সাথে ক্ষেতের ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই করে বস্তাবন্ধি করছেন।
এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এখন জমিতে পানি না জমলেও গত ২-৩ দিন ধরে চোখ রাঙাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়। তবে ২৩ এপ্রিল থেকে লাগাতার ১১ দিন ঝড়বৃষ্টির সংকেত দিয়েছিলেন আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কতৃপক্ষরা । অথচ এরকম কিছু হয়নি, তাইতো ঝড়বৃষ্টির ভয়ে আধাপাকা ধানও কেটে ফেলছে অনেক কৃষকরা।
উপজেলার গলহা গ্রামের বর্গাচাষি মোঃ আঃ কুদ্দুছ মিয়া বলেন, কম খরচে বিষ মুক্ত বোরো ধান নিজে চাষ করেছি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার অশানুরূপ ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও চাহিদা মতো পাওয়ায় আমরা খুশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হোসেন আল বান্না জানান, মধ্যনগর ও ধর্মপাশায় ৩১ হাজার ৮ শত ৫২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার আশা করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আবাদ করা ফসলের ৯৯% ভাগ ধান কেটেছেন কৃষকরা। নেই শ্রমিক সংকটও। তাছাড়াও ধান কাটার একাধিক অত্যাধুনিক যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার) সরকার ভর্তুকি দিয়ে, কম মূল্যে কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।খোলা বাজারে বিজা ধানের মূল্য রয়েছে ৯৫০ টাকা, শুকনো ধানের মূল্য ১১৫০ টাকা। এ মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলনে কৃষকরা নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন।