এম এ মান্নান,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নদী মানেই সভ্যতা, নদী মানেই সংযোগ। নদীই এদেশের সংস্কৃতি বিনির্মাণ করেছে, জনপদ তৈরি করেছে ও খাদ্য যুগিয়েছে। নদীর সঙ্গে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক অতি নিবিড়। এ নদীগুলোই দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। নদী রক্ষার তৎপরতা সারা পৃথিবী জুড়েই দৃশ্যমান। নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও নদী ভাবনা তৈরি করতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার পালন করা হয় ‘বিশ্ব নদী দিবস’।
আমাদের নদীগুলোর সঙ্গে বাঙালির সারাজীবনের সম্পর্ক। গ্রামের পাশে নদী, জেলেদের মাছ ধরা,চলমান নৌকা,শিশু কিশোরদের ঝাপিয়ে পড়ে গোসলের নয়নাভিরাম দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করে। জীববৈচিত্র্য আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করেছে। সারা বছর কম বেশি জলপ্রবাহ থাকায় নদীগুলো হয়ে ওঠেছে, লক্ষ প্রাণের এক একটি গতিময় অভয়ারণ্য। অসংখ্য ক্ষুদ্র অমেরুদন্ডী প্রাণী, আমাদের বেঁচে থাকার মাছ, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী; কত শত প্রাণের আবাসস্থল।
নদী ভরাট ও দূষণে মাছসহ অন্যান্য জীবের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ মরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রাজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে, আরও অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।
সমগ্র দেশে নদী রক্ষার তৎপরতা চলমান থাকলেও মাছ এবং ধানের রাজধানী খ্যাত সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার নদীরগুলো এখনো অবহেলিতই রয়ে গেছে।মধ্যনগরের তীরবর্তী সোমেশ্বরী ও উব্দাখালী নদী দিন দিন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে।পৌষ -চৈত্র মাস পর্যন্ত নদীর পানি থাকে একেবারে তলানিতে এমনকি কোন কোন জায়গা সম্পুর্ন শুকিয়ে যেতেও দেখা গেছে।বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নৌ চলাচল,হিড়িক পড়েছে দখলের।কমে যাচ্ছে মধ্যনগরের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। অভাব দেখা দিচ্ছে জমিতে ভাসমান পানি সেচের।
একদিকে পৌষ মাসের শুরুতেই নদী গুলোর পানি যেমন তলানিতে চলে যায় অপরদিকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে অল্প বৃষ্টি পাতেই নদী গুলো পানিতে ভরপুর হয়ে পরে।কৃষকদের ধান কাটার সময় হওয়ার আগেই দৌড়যাপ শুরু করতে হয় হাওড়ের বাঁধ রক্ষা করতে ।মালামাল আনা নেওয়ার খরচ কয়েকগুণ বেশি গুণতে হচ্ছে ভুক্তভোগীর। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষক, ব্যাবসায়ী ও সাধারণ মানুষের।
দ্রুত নদীগুলো খনন করা না হলে সমস্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
শাজদাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মাইনুল হক বলেন-নদী ও বিলগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমাদের পার্শ্ববর্তী হাওরের বুরো ফসল তোলার সময় অনেক ব্যাগ পোহাতে হয়।একদিকে সামান্য টেবলার পানিতে নিচু জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া অপরদিকে আগাম বন্যার ভয়ে অনেক জমিই রোপন করতে কৃষকরা সাহস পায় না।এবছরও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আমাদের রেকর্ডভুক্ত প্রায় ১ একর জমি চাষাবাদ করা হয়নি। দ্রুত নদী ও বিলগুলো খনন করা হলে আমাদের নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা আধিক আগ্রহ নিয়ে চাষাবাদ করবে এতে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যের মজবুত বৃদ্ধি পাবে।
মধ্যনগর আড়ৎ কল্যাণ সমিতির সভাপতি জহিরুল হক বলেন-নদীগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের মধ্যনগর বাজারের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে।আমরা আগে নদীপথে সহজে ধান চাল ও অন্যান্য সামগ্রী কম খরচে আনা নেওয়া করতে পারতাম।নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পৌষ মাসের শুরুতেই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এতে করে আমাদের মালামাল আনা নেওয়া খরতে ক্যারিং খরচ কয়েকগুণ বেশি হয়।দ্রুত নদীগুলো খনন করা না হলে এক সময় মধ্যনগর বাজারে দুর-দুরান্ত থেকে আসা ব্যাবসায়ীগণ মুখ ফিরিয়ে নিবে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন-মধ্যনগর উপজেলার নদীগুলো দিন দিন নব্যতা হারিয়ে ফেলছে।এই নদীগুলো খনন করা অতীব জরুরি। নদীগুলো খননের জন্য দ্রুত উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি প্রেরণ করবো।