মুক্তিযুদ্ধ বারবার আসে না। আর যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীর সন্তান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামে একটি ক্ষুদ্র ইসলামি দল সমর্থন করে। যদি উল্লেখ করার মতো কোনো ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করত, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সত্যিকারের দেশপ্রেমিক দেশবাসীর দুঃখ থাকত না। দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। ওই সময় যেমন ইসলামি দলের অভাব ছিল না, বর্তমানও ইসলামি দলের অভাব নেই। এমনও ঘটনা শুনেছি যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে বউ তালাক হয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের কথা না বলে দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং হচ্ছে। একজন মানুষ খুব সহজ-সরলভাবে কোনো ব্যক্তি বা নেতাকে ভালোবাসেন। কারণ, ওই লোকটাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ ভেবেই তাঁকে ভালোবাসেন। এটা হলো এক ব্যাপার। অপর দিকে কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দেশের স্বার্থের বিরোধিতার জন্য বা কোনো নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে অশ্রদ্ধা বা অপমান করার চিন্তা করেন, তা হলো অন্য ব্যাপার। কিন্তু বিচিত্র এই পৃথিবীর ইতিহাস বড় করুণ। এখানে আমরা আমাদের জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেভাবে অসম্মান করি, পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকিয়ে যা চিন্তা করলে লজ্জা এবং অপমানে মাথা নীচু হয়ে যায়।
তবে এর বেশ কিছু কারণ আছে। অবিভক্ত পাকিস্তান থাকা অবস্থায় সত্তরের নির্বাচনে বাংলাদেশের যতগুলো আসনে নির্বাচন হয়েছিল, সব আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে পাকিস্তান-সমর্থিত রাজনৈতিক দলের। মনে হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ পাকিস্তানের সমর্থক ছিল। কী জঘন্য ন্যক্কারজনক ঘটনা, স্বাধীন দেশে ১৯৭৩ সালে নির্বাচন হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করা হলো! কদিন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি কি গণতন্ত্রী না স্বৈরাচারী, তা-ও তো এ দেশের মানুষ বুঝতে পারেনি। এই স্বল্প কয় দিনের ক্ষমতায় থাকার সময় স্বাধীনতাবিরোধীরাসহ এককালীন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ কিছু সহচর এবং রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটি এবং তৎকালীন পাকিস্তান সমর্থক সব বড় বড় ধনী লোক জাতির জনক এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে যে কুৎসা রটনা করেছে, এ রকম কুৎসা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দৃশ্যত বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের বিরুদ্ধে।
আমরা সাধারণত দেখি, একটি ঘর ভেঙে ঘর তৈরি করতে বছর বছর সময় লেগে যায়। একটি দেশ মাত্র স্বাধীন হয়েছে। পাকিস্তানিরা সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। আমরা এই বাংলাদেশের কিছু মানুষ কি মীরজাফরের সার্থক উত্তরসূরী! যে ব্যক্তির বাঙালি জাতির প্রতি এত বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের জন্য সারা দেশের জমির আইলে আইলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। জীবনের সোনালি সময় জেলে-জেলে কাটিয়েছেন। পাকিস্তানিরা যা করতে সাহস পায়নি। আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা কিছু মীরজাফর, বেইমান এবং পৃথিবীর জঘন্যতম নরকীট। তাকে আমরা সপরিবারে কীভাবে খুন করলাম?
'৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যা করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বর্তমানে তথ্যপ্রবাহের হাইওয়ের যুগে সামান্য হলেও ইমরান খান আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানি একটি প্রদেশ বেলুচিস্তান। সেখানকার জনগণকে কীভাবে নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তথা পাঞ্জাবিরা, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারা আমাদের মতো স্বাধীন হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের একজন শেখ মুজিবুর রহমান নেই।
বাংলাদেশে এ অবস্থার জন্য প্রথমে দায়ী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরাজ শিকদারসহ তৎকালীন চীনপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল।
আর বর্তমানে দেশের এ অবস্থার জন্য বিএনপি, বিএনপি এবং বিএনপি দায়ী। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন দেখেছেন এবং জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন। সেনাবাহিনীর কারণে একটা দেশ বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ নামক একটা দেশের সৃষ্টি হয়েছে এবং জিয়াউর রহমান একটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করেছেন তাকে। এ তো অল্প কিছুদিন আগের ঘটনা! তিনি কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আসার জন্য দল সৃষ্টি করেন। তাতে এই প্রতীয়মান হয় যে তিনি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সব জঘন্যতম অপকৌশল মাথায় রেখেই জাতির জনকের মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল করেছেন। তিনি তাদের প্রকৃত উত্তরসূরী। কারণ, জাতির স্থপতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আইয়ুব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর উত্তরসূরীদের প্রেতাত্মা, জঘন্য নরপশু, পিশাচদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। ধূর্ত জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে একজন জনপ্রিয় সেনা কর্মকর্তা ছিলেন তার চতুর কৌশলের কারণে। তাঁর সামনে ১৫ আগস্ট, নরঘাতক-বিশ্বাস ভঙ্গকারী-পৃথিবীর জঘন্যতম ব্যক্তি খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতায় আরোহন, ৩ নভেম্বর, খালেদ মোশাররফসহ অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিক নিহত হওয়া এবং ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান। এত কিছু ঘটেছে। কিন্তু আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা হিসেবে ক্ষমতার মোহে আজ দেশটাকে এই পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান যদি মানবিক এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমিক হতেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকে একটু দয়ালু দৃষ্টিতে তাকাতেন তাহলে তৎকালীন সময় সব রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের ডেকে বলতেন, আমার সেনাবাহিনীর ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে। আমি একটি নির্বাচন দেব। আপনারা রাজনৈতিক দলের নেতারা তার জন্য প্রস্তুতি নেন এবং একটা সুন্দর নির্বাচন দিয়ে আমি ব্যারাকে ফিরে যাব। যদিও এ ধরনের অভিব্যক্তি সংবিধান এবং সেনাবাহিনীর শপথের পরিপন্থী; তারপরও অনৈতিক আবেগে যদিও বলা হয়। তিনি তা না করে বিভিন্ন দল থেকে নেতা-কর্মী ভাগিয়ে এনে নতুন দল করলেন! এখানেই সদ্য জন্ম নেওয়া স্বাধীন একটা দেশের রাজনৈতিক আদর্শ ধ্বংস হয়ে গেল এবং গরু-ছাগলের মতো রাজনৈতিক নেতারা বিক্রি হওয়া শুরু হলো ! তিনি নিহত হওয়ার পর, তাঁর সার্থক উত্তরসূরী আরেক আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আবির্ভাব ঘটে। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁকে সরাতে অনেক ত্যাগ এবং রক্ত ঝরাতে হয়েছে। সেলিম, দেলোয়ার, রাউফুন বসুনিয়া, কাঞ্চন, মহিউদ্দিন, দিপালী সাহা, ডা. মিলন, নূর হোসেনসহ জানা-অজানা কত দেশপ্রেমিক যে শহীদ হয়েছেন। এরশাদের পতনের পর বিএনপি তথা খালেদা-তারেক ক্ষমতায় আসেন। তাঁরা মা-ছেলে মিলে বাকিটা শেষ করে দিলেন! আজ দেশের এই অবস্থার জন্য বিএনপি তথা খালেদা-তারেক দায়ী। সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা। রমনা বটমূলে বোমা হামলা। উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা। আহসান উল্লাহ মাস্টারকে খুন। স্বাধীনতার অন্যতম রূপকার কাজী আরেফকে খুন। ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা হামলা। খুলনার প্রখ্যাত নেতা এস এম রবকে খুন। এস এম এ এস কিবরিয়াকে খুন। ২১ আগস্টের গ্র্যান্ড হামলা। পিচ্চি হান্নানসহ কালা জাহাঙ্গীরদের দৌরাত্ম্য। হিন্দু মায়ের অবোধ কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। মায়ের আকুতি, আমার শিশুকে একটু রয়েশয়ে তোমরা .... ...।
অপর দিকে খালেদা-তারেকের আমলে, উপনির্বাচনে অবৈধভাবে বিএনপির দলীয় প্রার্থীকে জয়লাভ করার জন্য ভোট ডাকাতি করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়।
হাসিনার লগি-বৈঠার বাড়ির চোটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তথা হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিলে কী হবে এক আল্লাহ জানেন। কারণ, একজন বিএনপির অতি সাধারণ সমর্থক থেকে আরম্ভ করে তারেক জিয়া পর্যন্ত যে ভাষায় কথা বলেন, তাতে দেশে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বা অন্ধকার যুগ নেমে আসতে পারে। তবে খালেদা-তারেক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সময় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ওপর যা যা করেছেন, হাসিনা তা তা করলে দেশ আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে চলে যেত।
তারপরও বিএনপি-জামায়াত জোট যা যা করেছে, হাসিনা তার কিছু হলেও অনুসরণ করছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে হাসিনা সারা দেশে ত্যাগী দলীয় নেতা-কর্মীদের সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দিয়েছেন; অপর দিকে বিএনপি তথা খালেদা জিয়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের মনোনয়ন দিয়েছেন। হাসিনা আদর্শের কাছে হেরে গেলেন। খালেদা টাকার জোরে জয় লাভ করলেন। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে হাসিনাও খালেদাকে অনুসরণ করলেন এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেন। হাসিনার টিকে আছেন বিএনপি-জামায়াতের দেখানো পথে চলে!
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।