মোঃ শফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামীকাল বুধবার রংপুর সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ১০ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। ১২ বছর আগে ২০১১ সালে তিনি এখানে শেষবার ভাষণ দেন।
সমাবেশে তিনি ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রায় ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।
রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান তার কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ আগস্ট রংপুর জেলা সফর করবেন। তিনি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিশাল জনসভা থেকে প্রায় ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
রংপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের প্রকল্প পরিচালক উপ-সচিব মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর ১০ তলা বিশিষ্ট নভোথিয়েটারটি নির্মিত হচ্ছে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে নির্মিত হতে যাওয়া নভোথিয়েটারটি এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে বলে জানান তিনি। হালিম বলেন, এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ছাত্ররা মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে সহজে জানতে পারবে এবং বিজ্ঞান পড়তে উৎসাহিত হবে। সরকার ইতোমধ্যে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ করেছে এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনায় আরো চারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজশাহীতে নভোথিয়েটারের কাজ প্রায় শেষ এবং এক-দুই মাসের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতোপূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে একটি করে নভোথিয়েটার হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো-শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, রংপুর পালিছড়া স্টেডিয়াম, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- নলেয়া নদী পুনঃখনন ১৯.১৪ কিলোমিটার, আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন ১৯.২৪ কিলোমিটার নৈমুল্লা বিল পুনঃখনন ১৪.৫৭ একর, চিকলী বিল পুনঃখনন ১৯.৬৩ একর, ভারারদহ ও পাটোয়া কামরী বিল পুনঃখনন ২২.৮৯ একর।
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো-পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী জিসি থেকে শঠিবাড়ী আরএন্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেন্ডাবাড়ী থেকে খালাশপীর জিসি পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ, কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর জিসি থেকে রাস্তার পুনর্বাসন কাজ। মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরএন্ডএইচ সড়কে ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং কাউনিয়া উপজেলার পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো- রংপুর মেডিকেল কলেজ বহুমুখী ভবন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, পীরগঞ্জে মাথরগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুরে উপজেলা, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ নং চতরা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র্র, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।
রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে নৌকার আদলে সভামঞ্চ
অন্য প্রকল্পগুলো হলো-পীরগঞ্জ উপজেলার ২৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থা পরিদর্শন অফিস ভবন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএ’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সাল থেকে প্রায় পাঁচ বছর পরে রংপুর বিভাগীয় সদর দফতরে আসছেন এ খবরে পুরো রংপুর উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।
রংপুর আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও পোস্টারে সাজানো হয়েছে পুরো রংপুর।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চলছে নানা প্রস্তুতি।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেন, আগামী ২ আগস্ট তাদের ভাগ্যনির্মাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে সর্বস্তরের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
মহাসমাবেশে দশ লাখের বেশি লোকের সমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, আগামী ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর রংপুর আগমন উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। তিনি আরও বলেন,
এ লক্ষ্যে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।