সোহারাফ হোসেন সৌরাভ সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরায় বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সাংবাদিক, কলামিষ্ট, আইনজীবী ও উপস্থাপক খন্দকার আবু তালেবের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ মার্চ) বেলা ১২ টায় সাতক্ষীরা সাংবাদিক কেন্দ্রের আয়োজনে শহিদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব’র স্মরণে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ’র সভাপতিত্বে ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কাশেম’র সঞ্চালায় বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম মিনি, আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারি, সদস্য এসএম শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক এম জিললুর রহমান, শামীম পারভেজ, আব্দুস সামাদ, আহসানুর রহমান রাজিব, ফারুক রহমান, আসাদুজ্জামান সরদার, আলতাফ হোসেন বাবু, শহীদুজ্জামান শিমুল, রিজাউল করিম,নাজমুস শাহাদাত জাকির, হাবিবুল হাসান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সাংবাদিক, কলামিস্ট, আইনজীবী ও উপস্থাপক ছিলেন খন্দকার আবু তালেব। খন্দকার আবু তালেব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ৬-দফার মূল ইংরেজি ভাষ্যের বাংলা অনুবাদক। এছাড়া ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অনুবাদও করেছিলেন তিনি।
বক্তারা তার জীবন ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ,ষাটের দশকের শুরুর দিকে ‘১৯৬১-৬২’ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু তালেব ছিলেন একাধারে সাংবাদিক ও আইনজীবী। তবে আপসহীন সাংবাদিক নেতা খন্দকার আবু তালেব কাগজের মানুষ হিসবেই পরিচিত ছিলেন। খন্দকার আবু তালেব ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরুর পর,৭১’র ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে বিহারিদের সহায়তায় মিরপুর ১০ নাম্বারের বাসস্ট্যান্ড থেকে ধরে নিয়ে জল্লাদখানা পাম্প হাউজে জবাই করে কাদের মোল্লা।
বক্তারা আরও বলেন, সাংবাদিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেব ১৯২১ সালের ২৩ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার সাতানী গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা খন্দকার আবদুর রউফ এবং মাতা রোকেয়া খাতুন। ১৯৪৪ সালে তিনি সাতক্ষীরা পি.এন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতা রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আই.এ পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে বি.কম এবং ১৯৫৬ সালে এল.এল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা রিপন কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে খন্দকার আবু তালেব কলকাতায়ই তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ৪৭’এ দেশ ভাগের পর তিনি ঢাকায় এসে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন এবং একে একে দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইনসাফ, পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক সংবাদ ও ইত্তেফাকে কাজ করেন।
১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই সময় আইয়ুব সরকার ইত্তেফাক পত্রিকা বন্ধ করে দিলে তিনি ব্যবস্থাপক পরিচালক হিসেবে আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক সন্ধ্যা আওয়াজ পত্রিকা প্রকাশ করেন। রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি খন্দকার আবু তালেব ‘লুব্ধক’ ছদ্মনামে ‘খোশ নসিব’, ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’, ‘ভোট রঙ্গ’ প্রভৃতি জনপ্রিয় কলাম লিখতেন। সন্ধ্যা আওয়াজ পত্রিকায় ‘কাগজের মানুষ’ শীর্ষক ধারাবাহিক নিবন্ধে তিনি সাংবাদিকতা পেশার ‘ভিতর-বাহিরের’ বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেন।সন্ধ্যা আওয়াজ পত্রিকাতেই সর্বপ্রথম ৬-দফার মূল ইংরেজি ভাষ্যের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয় এবং খন্দকার আবু তালেব ছিলেন এর অনুবাদক।
১৯৬৯ সালে তিনি বিএনআর অ্যাডভাইজিং ফার্মে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন এবং অন্যান্য কয়েকটি পত্রিকার কোর্ট রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি বিনা পারিশ্রমিকে বহু মানুষের জন্য আইনি লড়াইও করেছেন তিনি।
শহীদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে ২৯ মার্চ মিরপুরের বিহারিদের সহায়তায় পাকসেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। পরে মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে তাঁকে কসাই কাদের মোল্লা ও তার জল্লাদবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। ১৯৯৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিরপুর ‘শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়’ স্থাপিত হয়েছে।
বক্তারা সাতক্ষীরায় শহিদ খন্দকার আবু তালেবের জীবন ও কর্মকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণের দাবি জানান।