মোঃ আরিফুজ্জামান সাগর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে যিনি ছিলেন প্রেরণা, নিজের সন্তানকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, পিছু হটতে শিখেননি এক জীবনে। নিজের স্বামীকে হারালেন সেই বছরই। কিন্তু কি যেন এক অদ্ভুত শক্তি ছিলো আম্মার মাঝে। যিনি অগ্রদুত।
মশাল হাতে দেখিয়েছেন পথ। জানতেন এই পথ সহজ নয়, কিন্তু জানতেন একবার থামলেই পিছিয়ে যাবেন অনেকটা পথ।
ক্র্যাক প্লাটুন কে তিনি ঢাকায় কোলে পিঠে করে রেখেছিলেন। তার পরিনাম দিতে হয়েছিলো ছেলেকে হারিয়ে, কিন্তু তিনি তো দমে থাকার পাত্র নন, সব সয়ে বেড়িয়েছেন বাকি জীবন জুড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক সরকার এলে বহুদলীয় গনতন্ত্রের সুযোগ পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো জামায়াতে ইসলাম। ওরা চেয়েছিলো বাংলাদেশ আবার ফিরে যাক পাকিস্তানী চেতনায়।
বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন জননী। জীবনে কম আঘাত তো সহ্য করেন নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছেন নিজের চোখে সামনে থেকে, ছেলেদের সাহস জুগিয়েছেন ব্যথা ভুলে তবুও এগিয়েছেন অনেকটুকু পথে।
নব্বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে যখন গণ আন্দোলন গড়ে তুলেন প্রতিটি পদক্ষেপে ছিলো ভয়। কিন্তু তিনি তো ভীতু নন। পথ দেখিয়েছেন প্রজন্মকে। গণ আদালত নিয়ে খালেদা সরকার করলো মামলা, হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আম্মা সহ যোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পুনরায়।
দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
তিনি জানতেন সুফল আসবে, আসবে সুদিন। এবং সুদিন এসেছে। তিনি দেখে যেতে পারেননি সঠিক কিন্তু জান্নাত থেকে ঠিকই দেখেছেন।
২৮ মার্চ ১৯৯৩ সালে পুলিশ হামলা চালালো শহীদ জননীর উপর। ভর্তি হলেন পিজি হাসপাতালে। সেই শুরু, কিন্তু প্রেরণায় ছিলেন প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি স্পন্দনে। বাক শক্তি হারিয়েছেন ক্যান্সারে, কিন্তু হেরে জাননি কোনো পথে। মৃত্যু হয়তো গ্রাস করেছিলো আম্মাকে কিন্তু তিনি তো অপরাজিত। যার ফল আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের রায়ে। আম্মা জাতিকে প্রেরণা, শক্তি জুগিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তে।
জাহানারা ইমামের সাহিত্য ভান্ডার ও অসামান্য। শিশুদের জন্য তাঁর রচিত গজকচ্ছপ, সাতটি তারার ঝিকিমিকি ,বিদায় দে মা ঘুরে আসি কি অপূর্ব।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর লেখা একাত্তরের দিনগুলি তো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ। আরেকটা হলো বীরশ্রেষ্ঠ। তাঁর লেখা অন্য জীবন, জীবন মৃত্যু, শেক্সপীয়রের ট্রাজেডি, নিঃসঙ্গ পাইন, বুকের ভিতরে আগুন কি অসামান্য রচনা। কিংবা নাটকের অবসান ও দুই মেরু। তিনি অসম্ভব শক্তিমান প্রাবন্ধিক ছিলেন।
আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন ।বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো শহীদ জননীর প্রতি।