শেখ শোভন আহমেদ, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রোগমুক্তির আশায় পাকুড়গাছের একপাশে মুসলমানরা মাগরিবের নামাজ আদায় করছেন, অন্যপাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা করছেন পূজা-আর্চনা। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুদিয়া গ্রামের এক পাকুড়গাছকে ঘিরে।
মন্দিরের পাকুড়গাছ ঘিরে নামাজ, পূজা ও ঝাড়-ফুঁকের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিষ্ণদিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম। তিনি বিষ্ণদিয়া কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা।
মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হয়ে তিনি কীভাবে এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছে তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
বর্তমান বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী-পুরুষ রোগমুক্তির আশায় ওই পাকুড়গাছের নিচে ভিড় করছেন। এখানে অনেকেই আসছেন মনের বাসনা পূরণ করতে, আবার অনেকেই বলছেন এসব কর্মকাণ্ড কুসংস্কার আর ভন্ডামি ছাড়া কিছুই না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিষ্ণুদিয়া গ্রামের কালী মন্দিরের পাশেই বিশাল আকৃতির এই পাকুড় গাছের অবস্থান আর এখানেই দাঁড়িয়ে আছেন আমিরুল ইসলাম। নতুন কেউ আসলে মুসলমানদের উদ্দেশে আমিরুল বলছেন, ‘আপনারা পাকুড়গাছকে লক্ষ্য করে সালাম দিন, আর বলুন আসসালামু আলাইকুম হাফেজ সাহেব পীর আউলিয়া কামেল বাবা আর হিন্দুরা বলুন জয় কালী মা।’
সেখানে দেখা যায়, মুসলমানরা গাছকে ঘিরে একপাশে নামাজ আদায় করছেন, আর অন্যপাশে সনাতন ধর্মের লোকেরা পূজা-অর্চনা করছেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষ রোগ মুক্তির জন্য পানি, বাতসা ও কদমা নিয়ে এসে পাকুড়গাছের নিচে রাখছেন। মাগরিবের নামাজ ও সন্ধ্যার পূজা শেষ হলে সবাই একসঙ্গে পাকুড়গাছ ঘিরে রোগমুক্তি কামনা করছেন।
কেউ কেউ টাকা-পয়সা নিয়ে এসে পাকুড়গাছের নিচে রাখছেন। সপ্তাহে তিন দিন ( বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গলবার) এই আসর বসে। এই আসরকে ঘিরে মেলাও বসেছে পাকুড়গাছের নিচে।
মানত নিয়ে আসা কমলা রানী নামের এক নারী বলেন, বিষ্ণদিয়া কালী মন্দিরের পাকুড়গাছে যারা যারা রোগমুক্তির জন্য আসে তারা ভালো হয়ে যায়। সপ্তাহে তিন দিন চলে এ কাজ। আছরের নামাজের পর থেকে হিন্দু-মুসলিমরা আসতে থাকেন।
কমলা বলেন, ‘মন্দির প্রাঙ্গণের একপাশে মুসলমানরা মাগরিবের নামাজ পড়েন, অন্যপাশে হিন্দুরা পূজা করেন। আমিও তাই রোগমুক্তির জন্য এসেছি। নামাজ ও পূজা শেষ হলে হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে পাকুড়গাছ ঘিরে রোগমুক্তি কামনা করেন।’
কালী মন্দিরের দায়িত্বে থাকা সুবাস দেবনাথ বলেন, ‘বিষ্ণদিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম অসুস্থ হলে মানত দেওয়ার পর তিনি সূস্থ হয়েছেন। আমিরুল আমাকে মন্দিরটা জাগ্রত করতে বলেন। সেই মোতাবেক কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েও তার রোগ ভালো হচ্ছিল না। পরে তিনি স্বপ্নে দেখতে পান গ্রামের মাঠের পাকুড়গাছে এমন কেউ থাকেন যার কাছে রোগমুক্তি চাইলে রোগী ভালো হয়ে যাবেন। তারপর তিনি সেখানে রোগমুক্তি কামনা করে সুস্থ হয়েছেন।
আমিরুল বলেন, ‘এরপর মন্দিরের দায়িত্বে থাকা সুবাস দেবনাথকে বলি, ‘‘তোমাদের পুরাতন কালী মন্দিরটা জাগ্রত করো। সেখানে পাকুড়গাছে মানত করে আমার কঠিন রোগ ভালো হয়েছে। সপ্তাহে বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গলবার তাদের আছরের নামাজের পর থেকে পূজা-অর্চনা শুরু করতে বলি।’
তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে পাকুড়গাছের একপাশে সন্ধ্যায় হিন্দুরা পূজা ও আরেক পাশে তিনি নিজে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে থাকেন। এখানে এসে অনেকেই সুস্থ হচ্ছেন। তবে এর জন্য আলাদা কোনো টাকা তিনি নেন না বলে দাবি করেন।
বিষ্ণুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা, উপজেলার নাগিরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আ. আজিজ বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে এক শ্রেণির লোকেরা এসব করছে। এসব কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমিরুল ইসলাম। তিনি একজন মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা হয়ে কীভাবে এসব করছে তা আমার বোধগম্য নয়। এসব ভণ্ডামি আর কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না।’
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিষ্ণুদিয়া গ্রামের এ কুসংস্কারের কথা শুনেছেন। বিষ্ণুদিয়া গ্রামের মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা হয়ে আমিরুল ইসলামের এসব কর্মকাণ্ড ঠিক না বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তিনি জানেন না। খোজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।