এম মনির চৌধুরী রানা, চট্টগ্রামঃ
দেশে গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। এ হিসাবে প্রতিদিন সড়কে নিহত হয়েছে ৩ জন শিক্ষার্থী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। নচট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ২০১১ সালের ১১ জুলাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। ওই ট্রাকে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষে বাড়ি ফিরছিল ৪২ শিক্ষার্থী। সে দুর্ঘটনায় তাদের সঙ্গে নিহত হয় আরো ৩ জন। দিনটিকে স্মরণ করে গতকাল ‘সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত: পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনা’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এতে একটি দুর্ঘটনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠটির চেয়ারম্যান ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫-১৭ বছর বয়সী স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে ২ হাজার ৬৪১ জন। ১৮-২৫ বছর বয়সী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে ২ হাজার ৯৭৮ জন।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে ৫ বছরে ১ হাজার ৫৩৪ শিক্ষার্থী পথচারী হিসেবে যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায় নিহত হয়েছে। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭২১ শিক্ষার্থী। একই সময়ে মোটরসাইকেলচালক বা আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ২ হাজার ৭৮৩ জন। ১৩-২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা মূলত বাইকচালক ও আরোহী হিসেবে প্রাণ হারিয়েছে।
দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে আঞ্চলিক ও মহাসড়কে। গত সাড়ে ৫ বছরের দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, এ সময় গ্রামীণ সড়কে ১ হাজার ৩৩৯ জন, শহরের সড়কে ১ হাজার ৪৮৬, আঞ্চলিক সড়কে ১ হাজার ৬৫১ ও মহাসড়কে ১ হাজার ১৪৩ শিক্ষার্থী নিহত হয়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ থ্রি-হুইলার দুর্ঘটনায়, ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ পণ্যবাহী মোটরযানের চাপায়, ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বাসচাপায়, ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বাইসাইকেল ও প্যাডেল রিকশা এবং ৩৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা এবং ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতাকে দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে দেখছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু কমাতে সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে বছরে একবার ক্যাম্পেইন আয়োজন করা, সরকারি উদ্যোগে শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া, ক্লাস পরীক্ষায় সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশ্ন থাকা, গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি, অনিরাপদ যানবাহন বন্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের সড়কে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানো ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা অন্যতম। সংবাদ সম্মেলনে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফেরদৌস খান, ট্রেজারার ড. জাহিদুল ইসলাম, লিগ্যাল ইকোনমিস্ট মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিক উপস্থিত প্রমুখ ।