মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন শহর কুয়াকাটায় একের পর এক গড়ে উঠছে অনুমোদনবিহীন বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক হোটেল ও ভবন।আবাসিক হোটেল প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ভবন নির্মাণে জননিরাপত্তা সহ কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে,ভবন নির্মাণে অর্থের বিনিময়ে আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়।যে যার মতো করে ভবন নির্মাণ করার ফলে নষ্ট হচ্ছে কুয়াকাটা শহরের সৌন্দর্য।কুয়াকাটা পৌরসভা এলাকায় ইমারত ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ,নকশা ও মাস্টার প্লান অনুমোদনের দায়িত্ব যে শুধুমাত্র পৌর কর্তৃপক্ষের তা অনেকেই যেন বেমালুম ভুলে গেছেন।পর্যটকরা যে সব গাড়ি নিয়ে কুয়াকাটা আসেন সে সব গাড়ির পার্কিং চার্জ আদায় করা যাচ্ছে না।সৈকতের পাড়ে ভাসমান ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স,গাড়ির পাকিং চার্জ আদায়,অটোরিকশা,মিশুক এসব গাড়ির লাইসেন্স থেকে আয় করতে পারছে না পৌরসভা। আইনকানুন মেনে ও নিয়মানুযায়ী এগুলো আদায় করা গেলে পৌরসভা ও সরকারের অনেক রাজস্ব আয় হতো। এসব রাজস্ব আয় থেকে পৌরসভা বঞ্চিত হচ্ছে। কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ ভাবে বহুতল আবাসিক হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকজন আবাসিক হোটেল মালিক গণপূর্ত বিভাগ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন।কিন্তু কী কারণে গণপূর্ত বিভাগ অনুমোদন দেয় তা জানা নেই পৌর মেয়রের।
কুয়াকাটা পৌরসভা এলাকায় রয়েছে ১২৪টি আবাসিক হোটেল।যাদের অধিকাংশেরই নেই নির্মাণের রেজিস্ট্রেশন পত্র।তেমনি নেই মাস্টার প্লান বা সয়েল টেস্টের অনুমোদন পত্র।এসব হোটেল যদি পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিতো তাহলে পৌরসভার রাজস্ব আয় হতো।পৌরসভার মাধ্যমে মাস্টার প্লান অনুমোদন হলে সুশৃঙ্খল ভাবে ভবন নির্মাণ হতো ও পৌরসভার রাজস্ব আয় হতো।পৌর শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত জায়গা না রেখে ড্রেনের ওপরই গড়ে তোলা হয়েছে অনেক ভবনের সীমানা প্রাচীর।
পর্যটন শহর কুয়াকাটা বিগত দিনে খুব অবহেলিত ছিল।এখন প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নজর দেয়ায় এর সমৃদ্ধি ঘটছে। তবে অনেক সমস্যা ও পরিকল্পনাহীনতা এর অফুরন্ত সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে।পর্যটকদের স্বার্থে সৈকতে কমপক্ষে ১০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী দরকার। পর্যটকরা সৈকতে ময়লা আর্বজনা ফেলে যেভাবে নোংরা করে ফেলে তা পরিষ্কার করার জন্য যত পরিচ্ছন্নতাকর্মী দরকার তা পৌরসভার নেই। সামান্য আয়ের পৌরসভার পক্ষে এত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বেতন দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। পৌরশহরে উপকণ্ঠে গত এক দশক ধরে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। অবৈধভাবে ও নকশা বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা ভবন গুলো হয়ে উঠছে মারণফাঁদ।এসব ভবনের বেশির ভাগই গড়ে উঠছে জলাশয়,খাল-বিল ও নিচু জমিতে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বেড়েছে জলাবদ্ধতা ও মশা। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে শহরে বেড়েছে যানজট।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন গড়ে উঠছে নতুন নতুন বহুতল ভবন,বাড়ছে জনসংখ্যা।সেই তুলনায় বড় হচ্ছে না ফুটপাত কিংবা সড়ক। তাই এখনই ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
পৌরবাসী ও সচেতন মহল মনে করে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারির অভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অনুমোদনবিহীন বহুতল ভবন।এসব ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী।আবার অগ্নিনির্বাপণসহ দুর্যোগকালে যাতায়াতের জন্য নেই প্রশস্ত কোনো সড়ক।ফলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ সমস্ত ভবন হয়ে উঠতে পারে মারণফাঁদ। দিন দিন নগরায়নের ফলে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় তীব্র হচ্ছে যানজট। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কুয়াকাটা বসবাসের অনুপযোগী একটি শহরে পরিণত হবে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর খোঁজ করে দেখলাম পৌরসভার মধ্যে ইমারত ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অনুমোদন নেয়ার নিয়ম থাকলেও নকশা প্লান নিচ্ছেন না হোটেল মালিকরা। এরপর উদ্যোগ নিলাম। তিনি আরো বলেন, যারা ক্ষমতায় যান,তাদের অনেকের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা রয়েছে।ফলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়।ভবন নির্মাণের আগে নকশা অনুমোদন নিতে হবে পৌরসভা থেকে। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য অনুমোদন বিহীন বহুতল ভবন।আমি চাই সবার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে পরিকল্পিত নগরায়ন।