মুজাহিদ সাতক্ষীরা ব্যুরো:
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার গুনাগার কাটী বেইলি ব্রিজ সংলগ্ন বেতনা নদীর সরকারিভাবে খনন করা নদীর মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। দীর্ঘদিন ধরে বেতনা নদীর গুনাগার কাটী শশান্মের পিছনের অংশে প্রকাশ্যে শ শ ট্রাক্টর মাটি বিক্রি হলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এভাবে নদীর মাটি বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মাটি বিক্রেতাদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তারা এ কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন।
জানা যায়, চলতি বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেতনা নদী খনন কাজ চলমান। খননকৃত মাটি নদীর দুই পাড়সহ পার্শ্ববর্তী ব্যক্তি মালিকানা জমিতে ২০ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট উঁচু করে মাটিগুলো রাখা হয়। নিয়মানুযায়ী এসব মাটি কোনো ব্যক্তির বিক্রির সুযোগ না থাকলেও অদৃশ্য শক্তির ছত্রছায়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুনছুর, ও তার ছেলে রানা ইসলাম এসব মাটি গাড়িপ্রতি ১০০০-১৩০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুটি এক্সকেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে এসব মাটি কেটে প্রায় ২০টি ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি দিন কমপক্ষে ১০০-১৫০ গাড়ি মাটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে মাটি বিক্রি করে এ চক্রটি একদিনে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অপেক্ষায় দুটি এক্সকেভেটর মেশিন দাঁড় করানো। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও পরবর্তী তে তারা মাটি কাটা শুরু করবেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ইতিমধ্যে মাটিখেকোরা গুনাগার কাটী নদীর ব্রিজ থেকে কুল্যা বাজারের দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ সময় সেখানে মাটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা কথিত আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়দানকারী রানা ইসলাম বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়েই আমরা মাটি বিক্রি করছি। তবে নদী খননের মাটি বিক্রি করার এখতিয়ার উনাদের আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কুল্যা গ্রামের ইমাম হোসেন ও শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা প্রতি গাড়ি মাটি ১২০০ টাকা দরে কিনে নিয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, বাড়ির পাশেই নদী, অথচ এ মাটি আমাদের নগদ টাকায় কিনে নিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই মাটি বিক্রির কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে পিতা পুত্র।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এসএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সকাল হলেই মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলে। এসব ট্রাক্টরের শব্দে না পারছি পড়তে, না পারছি প্রতিবাদ করতে। মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত এক্সকেভেটর চালক জানান, ডিসি-ইউএনও, ওসি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবার পারমিশন নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানে। এ সময় তিনি নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রনি আলম নুর জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আর নদী খননের মাটি কোনো ব্যক্তিকে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি খোঁজ নেওয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।