শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

সুদখোর জলিল বাহিনীর কবল থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করেছে কালিগঞ্জের একটি সংখ্যালঘু পরিবার

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ জুন, ২০২২
  • ৫২৫ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

বহুল আলোচিত সুদখোর জলিল বাহিনীর কবল থেকে জীবন রক্ষা পেতে পুলিশ সুপারের নিকট প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের একটি সংখ্যালঘু পরিবার।

সুদখোর জলিল মহাজন এর প্রতারণার জালে আটকে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে অব্যাহত ভাবে নির্যাতিত এর হাত থেকে বাঁচতে এবং জীবনের নিরাপত্তা ও প্রতিকার চেয়ে এ পর্যন্ত কালিগঞ্জ থানায় ১২টি সাধারণ ডায়েরি করলে উল্টো এক মিনিটের ভিতর জমি ছাড়তে, নতুবা জেলহাজতে ঢোকানোর হুমকি দেওয়া হয়।

থানায় প্রতিকার না পেয়ে গত ২৯মে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের পুত্র সিদাম বিশ্বাস সুদখোর জলিল, মামুন, মেহেদী, রহিমসহ ৭জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ সুপার মহোদয় ওই দিনেই ৩৮০ নং স্মারকে অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এর গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ এর নিকট তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগের সূত্র এবং ভুক্তভোগী কালিগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস এবং তার পুত্র সিদাম বিশ্বাস সহ বাঁশতলা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের জানান, বাজারে চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় ফতেপুর গ্রামের ফজর আলী মোড়ল এর পুত্র সুদখোর মহাজন’ আব্দুল জলিল এর নিকট হতে ২০১০ সালে প্রতি হাজারে মাসে ৪০ টাকা হারে সুদের চুক্তিতে কয়েক দফায়৭ লাখ টাকা ঋণ নেয়। টাকার গ্রান্টার হিসাবে তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী এবং ছেলের সিদাম এর নিকট হতে জনতা ব্যাংক বাঁশতলা শাখার ১৩ টি চেক ছাড়াও কয়েকটি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। জলিলের কাছ থেকে নেওয়া টাকার সুদ দিতে না পারায় তাদের প্রতিবেশী শম্ভু বিশ্বাস সপরিবারে চুরি করে রাতের আঁধারে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। চলে যাওয়ার এক পর্যায়ে ভারতে অবস্থানরত শম্ভুকে বাংলাদেশ দেখাইয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কালিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২০১৪ সালে নিজ নামে ওই জমি জাল দলিল করে লিখে নেয়। চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাস আরো অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানায়, শম্ভু দেশ ছাড়ার পর সুদখোর জলিল তাদের ওপর বিশ্বাস না রাখতে পেরে জমির দলিল বন্ধক রেখে কালিগঞ্জের একটি ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা লোন করিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই টাকা দিয়ে সুদে-আসলে ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে দিলে তাদের ১৩টি চেক ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এক পর্যায়ে ২০২১সালের ২১ ডিসেম্বর তার ও স্ত্রী বাসন্তীর জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে কালিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক প্রতারক শফিকুল ইসলাম এর ঘরে ডেকে নিয়ে যায় সুদখোর জলিল ব্যাংকের লোনের কথা বলে ভয়-ভীতি দেখাইয়ে কয়েকটি লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়। পরে তারা জানতে পারে তাদের বসত-বাড়ি কৃষিজমি ও বাঁশতলা বাজারের ৩টি দোকান সহ ৩৬ শতক জমি ৩০ লাখ টাকায় জলিল মহাজন’ ও তার আত্মীয় রহিম এর কাছে বিক্রির জন্য ২৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় একটি বায়নাপত্র দলিল (যার নং ৫১৫৯) করে নেওয়া হয়েছে। ওই দলিলে বাকি টাকা পরিশোধ করে ২০১৭সালের ১৫ জুন এরমধ্যে দলিল করে দেওয়ার কথা বলা হয়। প্রতিবাদ করায় জমির দলিল করে দিলে ১৩টি চেক ফেরত দেবে বলে জানায়। পরবর্তীতে শেখ ফেরত না দিয়ে বিনা টাকায় বায়নাপত্র দলিল করে নেওয়ার বিষয়টি গন্যমান্য ব্যাক্তিদের জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে তার ছেলেকে খুন-গুমের হুমকি দিতে থাকে জলিল বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা। চিত্ত রঞ্জন বিশ্বাস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, সহায় সম্বল কেড়ে নিয়ে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে বিতাড়িত করে ভারতে যেতে বাধ্য করা হবে এমন আশঙ্কায় ওই জমি বাড়ি ও দোকান ২০১৭ সালে ৭ ডিসেম্বর পুত্র সিদাম এর নামে রেজিস্ট্রি দলিল করে দেই। বিষয়টি জানতে পেরে জলিল তাদের নামে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। একপর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ৮/১৮ নং মামলা করে। জলিল ও রহিম পরে সিদাম কে শ্রেণীভূক্ত করে আমরাও চেক নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জাতীয় পরিচয় পত্র সহ বিভিন্ন কাগজপত্র ফেরত পেতে ২০১৭ সালে ২০ মার্চ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জলিলের বিরুদ্ধে পিটিশন ১২৯১/১৭ নং মামলা রুজু করি। নোটিশ পাওয়ার ৪ মাস পর জলিল আমাদের (চিত্তরঞ্জন) বিরুদ্ধে আদালতে ৮লাখ টাকার ৩টি চেক ডিজঅনার মামলা ১১৩,১১৮এবং ১১৯নং। এরপরও জলিল, রহিম, মামুন, লাকি, শফিকুল ইউনুসকে গাছগাছালি কাটতে না দেওয়ায় তাদের ঘরবাড়ি জালাইয়া দেওয়াসহ জমি ও দোকান ঘর জবরদখল করে দেশ থেকে ভারতে পাঠানোর হুমকি-ধামকি অব্যাহত রাখে। এ প্রেক্ষিতে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ ছাড়াও কালিগঞ্জ থানায় এ পর্যন্ত ১২ টি সাধারণ ডায়েরি ৪টি অভিযোগ দিলেও থানা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আমাকে এক মিনিটের মধ্যে জমি ছাড়তে নির্দেশ দেন। না ছাড়লে জেলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি গুলো কোনরূপ তদন্ত ছাড়া সুদখোর জলিল এর নিকট হতে তুষ্ট হয়ে আর কোন আলোর মুখ দেখেনি।
ওইভাবে ফাইল চাপা পড়ে থানায় জব্দ তালিকায় স্তুপে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুদখোর জলিলের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান চিত্তরঞ্জন ও তারপুত্র সিদাম ব্যবসার জন্য প্রথম পর্যায়ে টাকা ধার দেন পরবর্তীতে পরিশোধ না করতে পেরে জমি ও দোকান লিখে দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রি বায়না পত্র করেন। কিন্তু পরবর্তীতে না দেওয়ায় আমরা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আমরাও বিষয়টির সুস্থ তদন্ত দাবি করছি।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।