জয়ন্ত সাহা যতন,স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রায় বছর দুয়েক ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত অফিস সহায়ক। আর তাকে হাজিরা খাতায় নিয়মিত দেখিয়ে বেতন-ভাতা দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। অনিয়মের এমন অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বৃক্ষরোপণে জাতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত জহুরুল হাট হাজী এলাহী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গেল ১২ নভেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন বিজয় চৌধুরী নামের এক অভিভাবক।
কিন্তু সরেজমিনে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানা যায় অভিযোগের সাথে মিল নেই বাস্তব চিত্রের। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বছর কয়েক আগে গ্রাম্য সুদ কারবারিদের বিভিন্ন জনের নিকট টাকা ধার নিয়েছিলেন অফিস সহায়ক (পিয়ন) সুকুমার চন্দ্র সরকার। পরে লাভের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে গিয়ে একের পর এক গ্রাম্য মহাজনের ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। ধীরেধীরে লাভের অংকটা বেশি হওয়ায় তা আর চালাতে পারছিলেন না সুকুমার। তাই তো দুই মেয়েকে ফেলে বিনাবেতনে ছুটি নিয়ে গত ২৫ অক্টোবর রাতের আঁধারে বাড়ি ছাড়তে হয় সুকুমারকে।
সুকুমারের ওপর কোনো ক্ষোভ না থাকলেও ঐ স্কুলে আগামীতে নিয়োগ রয়েছে বলে ওই অভিযোগ করা হয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়দের অনেকেই।
অভিযোগকারী বিজয় চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সুকুমার সুদে টাকা ধার নিয়েছিলেন। দিতে না পেরে এক দেড় বছর থেকে উধাও হয় সে। হেডমাস্টার বেতন দিচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে দিচ্ছেন, কেন দিচ্ছেন তা জানা নেই আমাদের। অথচ, বিজয় চৌধুরী তার লিখিত অভিযোগে বলেছেন সুকুমারের বিদ্যালয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত আছেন। এতে তার অভিযোগ ও গণমাধ্যম কর্মীকে দেয়া বক্তব্যের মধ্যে গরমিল দেখা যায়।
স্থানীয় সোহেল নামের অপর এক অভিযোগকারী বলছেন, সুকুমার এক দেড় বছর ধরে স্কুলে আসেন না। কিন্তু নিয়মিত তার বেতন-ভাতা তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আমরা একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ দিকে, সুকুমারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট মেয়েটিই থাকে সেখানে। বড় মেয়েটি পড়ছে কোনো এক বেসরকারি নার্সিং কলেজে। জানা গেল, মেয়েটিকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন পাশের বাড়ির সুকুমারের ছোট ভাই স্বপন কুমার। ঋণের কারণে বাবার লুকিয়ে থাকার কথা বলেই দুচোখ পানিতে ছলছল হয়ে ওঠে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির।
সুকুমারের ভাই স্বপন কুমার বলেন, সুদের টাকার চাপে বাড়িতে থাকতে পারেনা তার ভাই। লুকিয়ে লুকিয়ে ডিউটি করতে হয় তাকে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো মেয়ে দুটোর পড়াশোনা করা হবে না আর। এ বিষয়ে এলাকার সচেতন মহল ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে সুকুমারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স্কুলে এসে সুদ কারবারিরা প্রাণনাশের হুমকী দেয়। এজন্য হেড স্যার ও কমিটিকে বলে রাতের ডিউটি নিয়েছি। আর দিনে ডিউটি করে নাইট গার্ড। এভাবে পালিয়ে থাকতে না পেরে গত ২৫ অক্টোবর আমি বিনাবেতনে ছুটি নিয়েছি।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বাদশা জানান, সুদে ধার নেওয়া টাকা শোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা মাঝে মধ্যে স্কুলে এসে হুমকী দেওয়ায় তার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে গেল বছরের ৭ নভেম্বর রেজুলেশনের মাধ্যমে সুকুমারকে রাতের ডিউটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে সুকুমার নিয়মিত রাতের বেলা স্কুলে থাকে। হাজিরা খাতা ও বেতন বিলে সই, স্বাক্ষর সে নিজেই করে। গত ২৫ অক্টোবর বিনা বেতনে ছুটির আবেদন দিয়েছে সে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চেয়েছি। জবাব পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, গ্রাম্য মহাজনের ঋণের কারণে লুকিয়ে থাকা সুকুমার যেন চাপমুক্ত থেকে স্কুলে এসে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং একই সঙ্গে বৃক্ষরোপণে জাতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত বিদ্যালয়টির সুনাম যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সেজন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন বলে প্রত্যাশা করেন এলাকাবাসী।