বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
শুরু হলো চলতি বছরের সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২টি কুপে এখন চলছে গোলপাতা আহরণ। নির্বিঘে গোলপাতা কাটতে পেরে খুশি বাওয়ালিরা। বন বিভাগের কঠোর নিরাপত্তা আর কড়াকড়িতে প্রথম ট্রিপের গোলপাতা কাটতে এখন অধিক ব্যস্ত বাওয়ালীরা। বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে গোলপাতা আহরণে বনের অভ্যন্তরে যাচ্ছেন বাওয়ালিরা। ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এ মৌসুম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) স্টেশন অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান। তিনি জানান, আজ থেকে গোলপাতা আহরণকারী বাওয়ালিদের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়েই বনে ঢুকছেন উপকূলের বাওয়ালিরা।
জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে বনজদ্রব্যআহরণ সঙ্কুচিত এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বাওয়ালীরা। গোলপাতা আহরণের ভরা মৌসুমে এবার বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ছিল বন বিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২টি কুপ (জোন) থেকে ব্যবসায়ীরা অনুমতি গ্রহণ করে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে এর উপর নির্ভরশীল শ্রমজীবি মানুষেরা। তবে বনের ওপর থেকে চাপ কমাতে বনজদ্রব্য আহরণ সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে বন বিভাগ।
বাওয়ালী নুর ইসলাম সানা জানান, ২০ বছর ধরে তিনি সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করে আসছি। কিন্তু বন বিভাগের এত কড়াকড়ি আগে কখনও দেখেনি। ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে বলে তিনি জানান।
মোংলা খুচরা গোলপাতা ব্যবসায়ী লিটন বলেন, এখন আগের মতো আর গোলপাতার চাহিদা নেই। বিক্রি কম হওয়ায় অনেক খুচরা বিক্রেতাদের গত বছরের গোলপাতা এখনো রয়ে গেছে। তবে অনেক বাওয়ালী বলেন, গোলপাতায় যে পরিমাণ টাকা লগ্নি করা হয়, সেই তুলনায় ব্যবসা নেই।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) স্টেশন অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান জানান, নিবির্ঘে যাতে বাওয়ালীরা গোলপাতা কাটতে পারে তার জন্য বন বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে দুটি গোলপাতার কূপ রয়েছে। একটি হলো শ্যালা গোলপাতা কূপ আরেটি হলো চাঁদপাই গোলপাতা কূপ। সুন্দরবনের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য বনজদ্রব্য আহরণ সীমিত করা হয়েছে। তিনি প্রতিটি কুপে নিয়মিত তদারকি করে বিএলসি নবায়ন করার অনুমতি দিয়েছেন। পাশাপাশি কুপে নৌকার মিল রেখে গোলপাতা কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, গোলপাতা আহরণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, গোলপাতা আহরণের সময় বনের অন্য কোনো ধরনের গাছপালা কাটা যাবে না, গোলপাতা আহরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় বনে অবস্থান করা যাবে না, নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে হবে, গোলপাতা ঝাড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোনোভাবেই কাটা যাবে না এবং গোলপাতার আড়ালে যাতে কোনো ধরণের বনজদ্রব্য পাচার না হয় সে বিষয়টি নিবিড় তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। যদা কোনো বাওয়ালি গোলপাতার পাশাপাশি অন্য প্রজাতির গাছ কাটে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বন বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া গোলপাতা আহরণ মৌসুম চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ মৌসুমে শ্যালা কূপ থেকে চার হাজার মেট্রিক টন ও চাঁদপাই কূপ থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মৌসুমে প্রতি কুইন্টাল গোলপাতা আহরণে রাজস্ব নেয়া হয়েছিল ২৫ টাকা। আর এবার তা বাড়িয়ে প্রতি কুইন্টাল ৬৮ টাকা করা হয়েছে।