এস এ আখঞ্জী,তাহিরপুরঃ
হাওর- বাওর, নদ-নদী- নালা, খাল- বিলে বিস্তৃত সুনামগঞ্জ জেলা। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রামসার সাইট,প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত। এ হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ আজ হুমকির মুখে পড়েছে একমাত্র অপচনশীল সামগ্রী ব্যবহারের কারণে।তার মধ্যে বেশি পরিমাণে চিংড়ি মাছসহ ছোটমাছ ধরার জন্য এ হাওরে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি চাঁই ও চায়না হতে আমদানিকৃত চায়না দোয়ারী জাল।এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।
গেল ৬-৭ বছর পূর্বে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণে একজন এক্সিকিউটিব ম্যাজিস্ট্রেট এর সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকায় এর ব্যবহার খানিকটা কম থাকলেও বর্তমানে টাঙ্গুয়ার প্লাস্টিকের চাঁই ও চায়না দুয়ারি জালের অবাধ ব্যবহারের কারনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের।
জানাযায় গেল( ৩০এপ্রিল)প্লাস্টিকের তৈরি চাঁই নিয়ে যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা ১হাজার পিস প্লাস্টিকের তৈরি মাছ ধরার চাঁই জব্দ করে আগুনে পুড়ে ভুস্মিভূত করেন।এতেও থামেনি ওই পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের চাঁইয়ের আমদানি।প্রতিদিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে এসব চাঁই টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওর গুলোতে প্রবেশ করছে। বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের সবকটি হাওর প্লাস্টিকের চাঁইয়ের সয়লাব।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওর গুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হতো তাহলে হাওরের পরিবেশটা রক্ষা পেত।তারা জানান বর্তমানে হাওরগুলো যেন অরক্ষিত রয়েছে।
সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানাযায়,খুব সহজে বেশি পরিমাণ চিংড়িমাছসহ ছোট মাছ শিকার করার জন্য হাওরের প্রতিটি বিলেই ছড়িয়ে ছিঠিয়ে আছে প্লাস্টিকের তৈরি চাঁই ও চায়না দুয়ারি জাল। এগুলো সন্ধ্যার পূর্বে হাওর, বিল,নদী-নালায় পানির নিচে সারিবদ্ধভাবে সুতো দিয়ে বেধে ময়দার টোপ দিয়ে রেখে দেয়।সকালে এসে চাঁই তুলে এর ভিতর থেকে চিংড়ি ও ছোট মাছ বের করে সেগুলো এমনি ফেলে রেখে দেওয়া হয়।চায়না দুয়ারি জাল গুলো তুলে নিয়ে আসলেও, প্লাস্টিকের চাঁই গুলো নষ্ট হয়ে গেলে এভাবেই পানির নিচে থেকে যায়।যার ফলে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বিনাশ ।
টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা পশু চিকিৎসক আবুল ফয়েজ জানান টাঙ্গুয়ার হাওরে বেশি করে চিংড়ি মাছসহ নানাপ্রজাতির ছোটমাছ ধরার জন্য জেলেরা প্লাস্টিকের তৈরি চাঁই ও চায়না হতে আমদানিকৃত চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করছে।এই চাঁই ব্যবহারের পর নষ্ট হলে হাওরেই ফেলে দিচ্ছে। যাহা জলচর প্রাণীসহ মাছের জন্যও ক্ষতিকর।পরিবেশের জন্য ভয়ানক এই চাঁইয়ের ব্যবহার প্রতিরোধ করা না গেলে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ উপজেলার সবকটি হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।
হাওর পাড়ের একাধিক জেলে জানান,একসময় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওরগুলোতে চিংড়ি মাছসহ ছোটমাছ ধরার জন্য হাওর পাড়ের জেলেরা বাঁশবেতের তৈরি চাঁই ব্যবহার করতো।গেল ১০-১২ বছর ধরে সহজে বেশি মাছ ধরার জন্য প্লাস্টিকের চাঁই ও চায়না হতে আমদানিকৃত চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করা শুরু করায়,এখন স্থানীয়দের জেলেদের কাছে অনেকটাই প্রিয় হয়ে উঠেছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর ইকো ট্যুরিস্ট গাইড ও টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আহম্মদ কবির বলেন,প্লাস্টিক হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও সরকার ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওরে সচরাচর দেখা যায় এই পরিবেশ দুষণকারী প্লাস্টিকের চাঁইয়ের ব্যবহার এ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।
সিলেটে অবস্থানরত হাওর পাড়ের পরিবেশবাদী সমীরণ তালুকদার বলেন প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক ব্যবহারের পর যদি হাওরে যত্রতত্র ফেলে রাখে তাহলে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়বে।তিনি আর বলেন প্লাস্টিক অপচনশীল আর এসব প্লাসিকের মাছ ধরার চাঁই পানির নিচে ও জলাশয়ে ফেলে রাখলে মাছসহ জলচর বিভিন্ন প্রাণীর জন্য চরম ক্ষতিকর। এগুলো ব্যবহার রোধে স্থানীয় হাওরবাসীকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরী।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা এর অফিসিয়াল মোবাইল ফোনে, একাধিক বার ফোন করলেও, রিসিভ না হওয়ায় উনার মন্তব্য জানা যায় নি।