সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
৩১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি। তবে এখনও পর্যন্ত হয়নি জেলা বিএনপির ৯ টি ইউনিটের কোন কমিটি। এছাড়া কমিটি গঠনের কোন প্রক্রিয়ায় এখনও শুরু হয়নি। গত ৫ ফেব্রুয়ারী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সদস্য সচিব আব্দুল আলীম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চারটি উপজেলা ও একটি পৌরসভায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলেও পরদিন সাতক্ষীরা পৌরসভা ও চারটি উপজেলায় বিএনপির পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসান, আব্দুর রউফ ও মৃণাল কান্তি রায়। পাল্টাপাল্টি কমিটি দেওয়ায় উভয় কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ফলে আহবায়ক কমিটিতেই আটকে আছে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি। গত ৩১ মাসেও জেলা বিএনপির কোন ইউনিটের কমিটি গঠিত না হওয়ায় বর্তমান কমিটির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সদস্য সচিব আব্দুল আলিমের স্বজনপ্রীতি, পকেট কমিটি গঠনের অভিপ্রায় ও জনবিচ্ছিন্নতাকেই দায়ী করছেন বিএনপির পদ প্রত্যাশী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। পদ প্রত্যাশী ও তৃণমূল নেতা কর্মীরা অভিযোগ করে বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির কতিপয় নেতা দায়িত্বে থেকে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার বাসনায় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছেন। তাই ৩১ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন ইউনিটের কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি বর্তমান আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব। যারা ৩১ মাসেও একটি ওয়ার্ড কমিটিও গঠন করতে সক্ষম হয়নি তাদেরকে দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি কতটা সুফল পাবে? তারা আরো বলেন, বর্তমানে জেলা বিএনপির কোন ইউনিটের কমিটি না হওয়ায় আমরা আছি মহা বিপদে। জেলা বিএনপি দুইটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে জেলা বিএনপি’র দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব। জেলা বিএনপির দু’গ্রুপ একই দিনে প্রোগ্রামের আয়োজন করলে আমরা কোন গ্রুপে যাবো তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভূগতে হয়। আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শে রাজনীতি করি। আমরা কোন গ্রুপিং চাইনা। আমরা চাই প্রতিটি ইউনিটে সকলের সম্মতিতে একটি সুন্দর কমিটি। যে কমিটির নেতৃত্বে আমরা প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করবো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক পত্রে এড. সৈয়দ ইফতেখার আলীকে আহ্বায়ক এবং লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। ওই পত্রে ৩ মাসের মধ্যে জেলা বিএনপির ৯ টি ইউনিটের কমিটি গঠন করে জেলা কমিটি গঠনের লক্ষে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে কমিটি গঠনের প্রায় ২৫ মাস পরে আহবায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা ছাড়াই প্র্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা, সাতক্ষীরা পৌর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটার কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সদস্য সচিব আব্দুল আলিম। ওই কমিটিতে নিজের স্বজন ও বহিরাগতদের স্থান দিয়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগে পরদিন প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন তিন যুগ্ম আহবায়ক তারেকুল হাসান, আব্দুর রউফ ও মৃণাল কান্তি রায়। তবে কোন কমিটিই বৈধ্যতা পায়নি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। ফলে উভয় পক্ষের কমিটি স্থগিত করে দেয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মৃণাল কান্তি রায় রায় অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব সাংগঠনিকভাবে একেবারেই ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতা ও স্বজনপ্রীতির কারণে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমটি হয়নি। তারা আমাদের কোন মতামত না নিয়েই গত ৫ ফেব্রুয়ারী বর্তমান আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব যে কমিটি গঠন করেছিলেন সেখানে তাদের আত্মীয়দের বড়বড় পদে স্থান দেওয়া হয়েছিল। যাদেরকে আমরা কখনও রাজনীতির মাঠে দেখিনি তাদেরকে সামনে আনা হয়েছে। সামনে নির্বচনকে সামনে রেখে অনতিবিলম্বে এই আহবায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের কমিটির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সদস্য সচিব আব্দুল আলিম প্রত্যেকটি ইউনিটে পকেট কমিটি করতে মরিয়া হয়ে গেছে। তবে আমরা চায় প্রত্যেক ইউনিটে কমিটি হবে ওপেনলি। কমিটির সদস্য সচিব নিজের আত্মীয় ও যারা কোনদিন দল করেনি তাদেরকে নিয়ে কমিটি করার পায়তারা চালাচ্ছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দিলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল আলিম বলেন, ৩১ মাস কেন, ৩১ বছর পার হয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়া কমিটি হবেনা। কেন্দ্র হতে সাতক্ষীরার কমিটি হেল্ডআপ করে দেওয়া হয়েছে। পাল্টা পাল্টি কমিটি গঠন করার কারণে কমিটি হেল্ডআপ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কি কারণে কমিটি গঠন হেল্ড আপ করা হয়েছে সেটি সেন্ট্রাল ভাল বলতে পারবেন। গত ফেব্রুয়ারীতে ৫ টি ইউনিটে কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে আপনাদের বিরুদ্ধে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা দল করে, দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত হয় তাদের নিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।’ বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কমিটি দেওয়ার কারণে উভয় কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপি কখনও দ্বিধাবিভক্তিতে বিশ্বাস করেনা। তাদেরকে একতাবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির ভেতরে যে সমস্যা আছে তা অচিরেই সমাধান করা হবে।’