মাসুমা জাহান, বরিশাল ব্যুরোঃ
মায়ের অনৈতিক কার্যকলাপ দেখে ফেলায় ১৩ বছরের শিশু সন্তানকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে মা ও তার পরকীয়া প্রেমিক কবির খান তন্নি আক্তার নামের শিশুর লাশটি ঝুলিয়ে রাখে। এবং প্রেমিক কবির কৌশলে কেটে পড়লে মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করেন লিপি আক্তার (৪০)। গত মে মাসের ২৭ তারিখে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ছোট রাজাপুর গ্রামের এই ঘটনার রহস্য ৮দিনের মাথায় অর্থাৎ শনিবার (০৪ জুন) উন্মোচন করেছে সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশ।
শিশুটির মাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের পেছনের কাহিনী বেড়িয়ে আসে। তবে এই ঘটনায় পলাতক রয়েছেন তার পরকীয়া প্রেমিক একই ইউনিয়নের রামকাঠি গ্রামের নুরু খানের ছেলে কবির খান। পুলিশ তাকেও গ্রেফতারে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ জানায়, গত ২৭ মে অপরাহ্নে খবর আসে শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ছোট রাজাপুর গ্রামের সোহরাব হাওলাদারের শিশু কন্যা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশের একটি টিম গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় এবং পাশাপাশি কাউনিয়া থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা গ্রহণ করে।
কাউনিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি/তদন্ত) ছগির হোসেন জানান, ১৩ বছরের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়া এবং শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এই বিয়োগান্ত নিয়ে ভিন্ন কিছুর আলামত দেন। এই সব বিষয়াদী মাথায় রেখে ঘটনাটি তদন্ত শুরু করা হয় এবং মেয়েটির মায়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। একপর্যায়ে আচরণ সন্দেহজনক হলে লিপি আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেড়িয়ে আসে আসল রহস্য।
ঘাতক নারীর বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- ঘটনার দিন ২৭ মে দুপুরে লিপি আক্তার নিজ ঘরে তার পরকীয়া প্রেমিক কবির খানের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এই চিত্র তার মেয়ে তন্নি আক্তার দেখে ফেলে এবং তা তার বাবার কাছে বলে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিপি আক্তার এবং তার প্রেমিক কবির খান মিলে তন্নিকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলে নিজেরা আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচতে গলায় রশি বেধে লাশটি ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এবং প্রেমিক কবির খানকে কৌশলে সরিয়ে দিয়ে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে কান্নাকাটি শুরু করেন লিপি আক্তার।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের দূরদর্শিতায় শিশু হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে জানিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ঘাতক মাকে গ্রেফতার করা হলেও সহযোগী প্রেমিক কবির খান পলাতক রয়েছেন। তাকেও গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে। এই দুইজনকে অভিযুক্ত করে তন্নির বাবা সোহরাব হাওলাদার একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মা কে আদালতে পাঠালে বিচারক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।