দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন জনগণ উদ্বিগ্ন। কারণ, বিশ্বের যে অর্থনৈতিক অবস্থা, তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর প্রচণ্ডভাবে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ জীবনযাত্রার মান কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় এমনিতেই কোভিড-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বকে এক অস্থির পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। অপর দিকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী যেভাবে ফিলিস্তিনের ওপর তথা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, তা এক কথায় মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা হচ্ছে।
তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ। এখানে এখনো অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিহীন। মানুষের ন্যূনতম মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো গ্যারান্টি নেই। রাষ্ট্র ব্যক্তি বা দলের কর্তৃত্বে চলে। জনগণের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা ব্যক্তি এবং দলের স্বার্থে রাজনীতি করে। জনগণের জন্য তাদের দায়বদ্ধতা নেই। এখন যেভাবে ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে; তাতে এ দেশের মালিক জনগণের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। সুবিধাবাদী একটি গোষ্ঠী সুবিধা ধরে রাখার এবং আরেকটি গোষ্ঠী সুবিধা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। দেশের জনগণকে প্রতিনিয়ত তথাকথিত রাজনীতির নামে কষ্ট দিচ্ছে তথা পেইন দিচ্ছে। দেশের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দায়ী। কিন্তু জনগণের প্রতি তাদের কতটুকু দায়বদ্ধতা আছে, একমাত্র ওই সব দলের নেতারাই জানেন।
আগামীকাল ২৮ অক্টোবর দ্বিধাবিভক্ত জাতির এক চরম ক্রান্তিকাল। দেশবাসী খুব অস্থিরতার মধ্যে আছে। কারণ, ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার এই দ্বন্দ্বের নৈতিক প্রশ্ন নিয়ে সচেতন দেশবাসী খুবই অস্থিরতার মধ্যে আছে। দেশপ্রেমের দায়বদ্ধতা থেকে রাজনীতি করলে দেশের জনগণ মানবিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারত। রাজনীতি দেশের মানুষের কল্যাণে যদি হয় তাহলে দেশের জনগণ কেন বেদনা নেবে। কেন অস্থিরতা উপলব্ধি করবে। কেন তাদের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে নিজেরা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করবে। সেই সংগ্রামে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহযোগিতা না করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
আগামীকাল ২৮ অক্টোবর দেশে কী হবে, তা নিয়ে সচেতন জনগণ খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অপর দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাজনীতি যদি হয় মানবকল্যাণে, তাহলে ক্ষমতার জন্য এ কেমন কামড়াকামড়ি। জনগণ এ অস্থিরতা থেকে মুক্তি চায়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য অস্থির থাকতে হচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে কি একটি সুন্দর বাসযোগ্য বাংলাদেশ দিয়ে যেতে পারব কি না; তা আজকে অনেক বড় প্রশ্ন। কারণ, এ দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারার কোনো রাজনীতির বিকাশ আজও হয়নি। আর এ জন্য এ দেশের জনগণের কোনো হাত নেই। এ দেশের তথাকথিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দল যেখানে আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পথ তৈরি করে দেবে, সেখানে তারা আমাদের অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই অস্থির থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি সমঝোতা। আর এই সমঝোতাই হবে রাষ্ট্র তথা জনগণের কল্যাণে রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। রাজনীতি হোক দেশের কল্যাণে আর রাষ্ট্র হোক একটি কল্যাণমূলক।