আজহারুল ইসলাম সাদী, স্টাফ রিপোর্টারঃ
একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফি খানের আজ ৯৫ তম জন্মবার্ষিকী।
আন্তর্জাতিক ক্ষ্যতিসম্পন্ন শিশু বিশেষঞ্জ দেশের শিশু চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রবাদপুরুষ, শিক্ষাবিদ, জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফি খানের জন্ম সাতক্ষীরার রসূলপুর গ্রামে। পিতা আবদুল বারী খান সাতক্ষীরার সমাজহিতৈষী সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মা জায়েরা খানম ছিলেন বিদূষী নারী।
ডা এম আর খানের সহধর্মিণী মরহুম আনোয়ারা খান ছিলেন একজন স্বনামধন্য সমাজসেবী।
জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের (জন্ম ১ আগস্ট ১৯২৮-মত্যু ৫ নভেম্বর ২০১৬)। প্রাথমিক জীবন শুরু হয় সাতক্ষীরার রসূলপুর প্রাইমারি স্কুলে। সাতক্ষীরার পিএন হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কলেজে ড. কুদরত-ই-খুদার ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৪৫ সালে আইএসসি পাস করেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে সেখান থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ব্রিটেনের এডিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন থেকে ১৯৫৭ সালে ডিটিএমঅ্যান্ডএইচ এবং লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন থেকে ডিসিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এডিনবার্গ থেকে ১৯৬২ সালে এমআরসিটি ও ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এফসিপিএস এবং ১৯৭৮ সালে এফআরসিপি ডিগ্রি নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে পিএইচডি লাভ করেন।
কর্মজীবনে ডা: এম আর খান দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ১৯৫৯-৬৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার কেন্ট ও এডিনবার্গ গ্রুপ হাসপাতালে যথাক্রমে সহকারী রেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে ফিরে ১৯৬৩ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে শিশু বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে যোগদানের পর সেখানে শিশু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দিয়ে সেখানকার হাসপাতালে শিশু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রফেসর অব পেডিয়াট্রিকস হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে আইপিজিএমআরে অধ্যাপক পেডিয়াট্রিকস হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। সেখানে ডিসিএইচ এবং এফসিপিএস কোর্স চালু করেন। ১৯৭৩ সালে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। স্বল্প সময়ে সেখানে প্রভূত উন্নতি করেন। ১৯৭৯ সালে আবার আইপিজিএমআরে হেড, ডিপার্টমেন্ট অব পেডিয়াট্রিকস পদে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত থেকে সেখানে পেডিয়াট্রিকসের বিভিন্ন কোর্স সফলতার সাথে পরিচালনা করেন। ১৯৮৮ সালে দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে পিজি (আইপিজিএমআর) হাসপাতাল থেকে অবসরে যান।
শিশুদের সেবার মানসে ১৯৮৩ সালে শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে এটি পাঁচ জেলার ১২টি কর্ম এলাকায় সম্প্রসারিত। চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল ও সাতক্ষীরাতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা ছাড়া অনানুষ্ঠানিক সান্ধ্যকালীন প্রাথমিক শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং, পরিবেশের উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, আর্সেনিক ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ফিল্টার বিতরণ, টিউবওয়েল ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন, গরিব ও দুস্থ চক্ষুরোগীদের চিকিৎসা ও অপারেশনে আই ক্যাম্পের আয়োজন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন অন্ন, বস্ত্র ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রদান এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাড়ি নির্মাণ, টিউবওয়েল ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন, ক্ষুদ্রঋণ প্রদানসহ নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকার মিরপুরে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ ও শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং যশোরে শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠ করেছেন তিনি। শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন বাদেও স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজের পেনশনের টাকা, পৈত্রিক জমিজমা এবং স্ত্রীর সঞ্চয়ের অর্থে ১৯৮৫ সালে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য- ডা: এম আর খান অ্যান্ড আনোয়ারা ট্রাস্ট্র, উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজ, নিবেদিতা চিলড্র্রেন হাসপাতাল অ্রান্ড রিসার্স সেন্টার,সেন্ট্রাল হাসপাতাল ইত্যাদি।
এদিকে ডা. এম আর খানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ে দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৭টায় কোরআনখানী, ৯টায় র্যালি, ৯.৩০টায় কবরাস্থনে পুষ্পস্তাবক অর্পণ।