এস এ আখঞ্জী,তাহিরপুরঃ-
ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত, যার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে সারা দেশ জোরে, এর প্রবাদ বাক্যে বলে “- মৎস্য, পাথর, ধান এ জেলার প্রান। এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। যে আয়ের উপর নির্ভরশীল অধিকাংশ পরিবার। আর এ কৃষিতে দিন দিন যুক্ত হচ্ছে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতির মেশিন। যার ফলে, বিলুপ্তি হচ্ছে প্রাচীন কালের চাষবাসের পদ্ধতি। অতীত -ঐতিহ্য, গ্রাম- বাংলার গরু- মহিষ, লাঙ্গল-জোয়াল,মই, খারা- রশি নামক জিনিস গুলো কৃষকের সঙ্গে আর তেমন দেখা যায় না। এসব এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি।
২৭ নম্ভেবর রবিবার, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চক সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বীজতলা তৈরীতে হাল চাষ করছেন কৃষক। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি আবিস্কৃত যন্ত্রপাতির তৈরী (পাওয়ারটিলার নামক) মেশিন দ্বারা। যাহা অতি অল্প সময়ের মধ্যে খন্ড, খন্ড ভুমির বীজতলা তৈরি করে, অন্য আরেকটিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই হাল চাষ এখন ব্যবসায় পরিনতি হয়েছে কৃষক গনের মধ্যে । আর প্রাচীন কালের পদ্ধতির গরু, মহিষ লাঙ্গল-জোয়ালের মাধ্যমে হলে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হত। নিজের কাজ সাড়াটাই হত দায়। য়ার ফলে প্রাচীন পদ্ধতি থেকে সরে দাড়িয়েছেন কৃষক।
এ ব্যাপারে উপজেলার দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের সানজব উস্তার এর সাথে কথা হলে, তিনি বলেন, এখন আর গভীর রাতে , গরুকে হাটাতে থীতি,থীতি, হৈইত, শব্দ শোনা যায় না। আর কৃষকের পদচারণায় পাশের বাড়ির লোকজনের ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় না। হাওর-বাওর, মাঠেও আজ কৃষকের কন্ঠে ভাটিয়ালি সুরের আওয়াজ ওঠে না । আধুনিকতার ছোঁয়ায়, কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। যার ফলে কাক ডাক ভোরে আর কেউ লাঙ্গল -জোয়াল কাঁধে নিয়ে বীজতলায় বা জমি হাল চাষে যেতে হয় না। হেমন্ত ও ভাটির জনপদ শুনশান নীরব।কারণ অতি অল্প সময়ের গৃহস্থালির কাজ, রোপণ, কাটাই, মাইরাই দ্রুত সম্পুর্ন করে গোলায় তোলা সম্ভব হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি মেশিনের দ্বারা। প্রাচীন কালের পদ্ধতিতে চাষবাসের মাধ্যমে যে ফসল ফলানো হত। তাতে স্বাদ ছিল। এখন বিভিন্ন প্রযুক্তির কীটনাশক ঔষধ, রাসায়নিক সার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ালেও,ফলনশীল খাবার দ্রব্যে স্বাদ গেছে কমে।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি মাধ্যমে,
রোপণসহ কাটাই -মাইরাই হয়।এতে শ্রমিক সংকট হলেও বিপাকে পড়তে হয় না। স্বল্প সময়ে অধিক কার্য হাসিল করে, কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে । উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে চলছে কৃষি। তবে প্রাচীন কালের চাষবাসের মাধ্যমে যে ফসল উৎপাদন করা হত। তাতে প্রকৃতির স্বাদ পরিপূর্ণ থাকত। আজকালের কোনো কিছু মধ্যে প্রকৃতির স্বাদ খোঁজে পাওয়া যায় না। অধিক কীটনাশক আর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে অধিক উৎপাদন হয়, কিন্তু স্বাধ চলে গেছে । ভাটির অঞ্চলের কৃষক পরিবারে, গোয়ালে নেই গবাদিপশু, গাভীর দুধ সচরাচর দেখা যায় না, কৃষাণীর হাড়িতে,
গবাদিপশুকে গো-খাদ্য টেনে টেনে দেওয়ার দৃশ্য চোখেই পড়ে না। আজ সবেই স্মৃতি।
আগে অনেক জাতের ধান চাষাবাদ করা হত,লাঙ্গল জোয়ালের হাল চাষের মাধ্যমে, যেমন ঃ- রাতা সাইল, লাইটা গচি,টেপি, লাকাই, হাসিব, বাসপুল, বাইগুন বিচি নললুয়া টেপি, বোরো, ইত্যাদি। আর এখন বেশী উৎপাদনের জন্য ২৮,২৯ বি, ধান বেশি চাষাবাদ করা হয়।
এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু, মহিষ পালন করত হাল চাষ করার জন্য। আবার অনেকে গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন। আবার অনেকে, ধান গম, ভুট্টা, তিল, সরিষা, কলাই, আলু প্রভূতি চাষের জন্য ব্যবহার করতেন।
উপজেলার তরং গ্রামের কৃষক বাবুল বলেন, ছোটবেলায় হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠের তৈরি লাঙল, বাঁশের তৈরী জোয়াল, মই, লরি ইত্যাদি। এখন এসব শুধুই স্মৃতি। (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান শাহীন মিয়া বলেন, তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতির তৈরী মেশিন গুলো হওয়ায়, কৃষক কের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, হয়েছে উন্নয়ন। শেখ হাসিনার সরকার, কৃষি বান্ধব সরকার, তার প্রমাণ। আমার একটি পাওয়ার টিলারের আয়ের মাধ্যমে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি, আর নিজের জমি জমা হাল চাষ করতে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয় না।
আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জম পড়ত, এতে করে জমিতে অনেক জৈবসার হতো। ক্ষেতে ফলন ভালো হতো। এখন নতুন নতুন আধুনিক বিভিন্ন মেশিন এসেছে সেই মেশিন দিয়ে এখানকার লোকজন জমি চাষাবাদ করে। তাই এখনো গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে জমিতে হাল চাষ করা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
এব্যাপারে, তাহিরপুর উপজেলার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষক কের ভাগ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অতীতে তেমন প্রযুক্তি ছিল। যার ফলে কৃষক কঠিন পরিশ্রম করেও প্রাপ্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রাচীন কালের পদ্ধতির সহায়তা কেউ চায় না। আর আমাদের কাছে এমন কিছু আসেনি। উন্নয়নের সহযাত্রী হতে চাই আমরা ও।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান উর দৌলা এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় উৎপাদনের বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন কালে কিছু পদ্ধতি প্রায় বিলুপ্তির পথে চলেগেছে। কিন্তু লাভবান হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় । আমরা কৃষকে সার বীজ কীটনাশক ঔষধসহ তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কৃত মেশিন দিয়ে সহযোগিতা করছি। কিন্তু গবাদিপশু গরু, মহিষ দিচ্ছি না।