মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এলাকার খাবার হোটেলের মালিকেরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন। আজ বুধবার(১৭ আগস্ট) সকাল থেকে এ ধর্মঘট চলছে। হোটেল মালিকেরা জানিয়েছেন, খাবারের মান খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভিযোগ এনে প্রায় সময়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত হোটেল মালিকদের জেল-জরিমানার করছেন, যা যৌক্তিক নয়। এর প্রতিবাদে এ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক সভা করে কুয়াকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতি। সভা শেষে সমিতির সভাপতি মো. সেলিম মুন্সী অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। এ সময় কুয়াকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কলিম মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আলমগীর হোসেনসহ অন্য হোটেল মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে হঠাৎ করে ধর্মঘট আহ্বান করায় পর্যটকেরা বিপাকে পড়েছেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার নওসের আলী বলেন, ‘আমরা ২০ জনের মতো একটি দল কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছি। সব কটি খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় কুয়াকাটায় পৌঁছেই বিপদে পড়ে গেলাম। কোথায় খাব, কী করব, বুঝতে পারছি না।
রাজবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. আজমল হোসেন বলেন, ‘আমরা আরও দুই দিন কুয়াকাটায় থাকব বলে পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু খাবার হোটেল গুলো বন্ধ থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে দ্রুত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কুয়াকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কলিম মাহমুদ বলেন, ‘কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ৫০টির মতো খাবার হোটেল রয়েছে। গত দুই বছর দেশব্যাপী করোনার বিধিনিষেধ থাকায় এসব খাবার হোটেলের মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের প্রতিটি হোটেলে ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। করোনার সময়ে আমাদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি হোটেলের মালিকেরই ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দেনা রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আমরা খাবার হোটেলের মালিকেরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম, বিগত দিনে করোনার জন্য যে ক্ষতি হয়েছিল, পর্যটকদের ব্যাপক আগমনের কারণে সে ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ১১ জুলাই থেকে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক আগমন শুরু হওয়ার পর থেকেই ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাদের ওপর বিভিন্ন রকম হয়রানি শুরু করেছেন।
কলিম মাহমুদ আরও বলেন, ‘একজন খাবার হোটেলের মালিক বিক্রি করেছেন ১০ হাজার টাকা অথচ তাঁকে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। একজন হয়তো বিক্রি করেছেন ১৫ হাজার টাকা, তাঁকে জরিমানা করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এভাবে একের পর এক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করায় প্রত্যেক হোটেল মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত রান্না করা খাবার পর্যন্ত ফেলে দিয়েছেন। একজন হোটেল মালিক এ নিয়ে কথা বললে তাঁকে হাতকড়া লাগিয়ে পর্যটন পুলিশের বক্সে নিয়ে বসিয়ে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। এতে আমরা মালিকেরা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে কোনো খাবার হোটেলই আর খোলা হবে না।
কুয়াকাটা খাবার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম মুন্সী বলেন, ‘বাইরের পরিবেশ নোংরা হওয়ার অপরাধে একটি খাবার হোটেলকে দুবার জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের দাবি, ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। প্রতিটি রেস্তোরাঁর মালিকই আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত খাবার হোটেলকে সুসজ্জিত ও সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্য বলেছেন, কিন্তু হঠাৎ করে তা সম্ভব নয়।’ সে জন্য সময় দিতে হবে বলে তিনি জানান।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে কুয়াকাটায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে আসছেন। আমরা সব সময়ই খাবার হোটেলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, খাবার মান ঠিক রাখতে নির্দেশনা দিয়ে আসছি। অনেকে হোটেলে এসব নির্দেশনা না মেনে পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করে থাকে। পর্যটকেরাও এ নিয়ে প্রায় সময়ই অভিযোগ করে থাকেন। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের সুবিধার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাবার হোটেলের মালিকেরা কোনো সমস্যা মনে করলে এ নিয়ে কথা বলতে পারতেন। তা না করে হঠাৎ ধর্মঘট ডাকা যৌক্তিক হয়নি। এ নিয়ে খাবার হোটেলের মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।