বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
আনমনা প্রাঙ্গণের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শুক্রবার মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরের দুর্নীতির অনুসন্ধানে গতি চেয়ে দুদকে আবেদন, ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

মোঃ আরিফুজ্জামান সাগর,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩
  • ২৭৫ বার পঠিত

মোঃ আরিফুজ্জামান সাগর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

গাজীপুর সিটির বরখাস্ত মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে গতি আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি আবেদন জমা পড়েছে।

জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের মহাসচিব জি কে বাবুল বৃহস্পতিবার আবেদনটি দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটিতে জমা দেন।

তিনি জাহাঙ্গীর ও তার পরিজনসহ ঘনিষ্ঠ সহচরদের দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধানসহ তাদের সকলের সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদকের অনুসন্ধান কাজ গতিশীল করার আবেদন জানিয়েছেন।

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুদক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়। একই দিন অভিযোগের বিষয়ে দুদক গঠিত অনুসন্ধান টিম গাজীপুরের নগর ভবন, ব্যাংক ও পোশাক কারখনাসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান শুরু করে।

দুদকে করা আবেদনে জি কে বাবুল বলেন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ অসংখ্য পরিবারকে সর্বশান্ত করে শত-শত কোটি টাকা লুটপাট আর অন্যের জমি-ফ্যাক্টরি দখলসহ চাঁদাবাজি এবং ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করার মাস্টারমাইন্ড জাহাঙ্গীর আলম।

বিশ্ব ইজতেমার টাকা আত্মসাৎ দিয়ে শুরু হয় জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি আর কুকীর্তি। এরপর সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এবং প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার মাস্টারমাইন্ড খ্যাত জাহাঙ্গীরের নাম বারবার উঠে এসেছে।

আবেদনে তিনি আরও লিখেছেন, জাহাঙ্গীরের নানাবাড়ি গাজীপুরে। তবে তার দাদার বাড়ি নোয়াখালীতে। এই কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নাম যত্রতত্র ব্যবহার করে এই জাহাঙ্গীর অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে।

বাবা মিজানুর রহমানের অভাবের সংসারে ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীর। স্থানীয় চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। জাহাঙ্গীরদের পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপোড়নের কারণে তার মামা বিএনপি কর্মী শফিকুল আলম তাদের অভাবের সংসারে সামাল দিতে জাহাঙ্গীরকে নিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন।

জাহাঙ্গীরের মামা শফিকুল ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ইসলামপুরের বাগানবাড়ির কেয়ারটেকার। ১৯৯০-৯১ সালের দিকে আব্দুল আউয়াল মিন্টু গাজীপুরে প্রচুর জমিজমা কেনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেয়ারটেকার শফিকুলকে। সেসময় এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে শফিকুল জাহাঙ্গীরকেও যুক্ত করেন।

জমি কেনাবেচা ও দালালি করে জাহাঙ্গীর ধীরে ধীরে জমি-বাড়ি দখল করে কেনাবেচার কাজে জড়িয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীরের হাতে কাঁচা টাকা আসা শুরু হয়। একপর্যায়ে গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ঝুট ব্যবসা তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জাহাঙ্গীরের অর্থ আয়ের একটি বড় খাত হলো বিভিন্ন গার্মেন্টেসের ঝুট ও সুতার কারবার এবং জায়গা জমি-কেনাবেচা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টরি দখলসহ কমিশন বাণিজ্য করা।

জাহাঙ্গীর নিজেকে সম্রাট জাহাঙ্গীর মনে করে উল্লেখ করে দুদকে আবেদনকারী আরও বলেছেন, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিভিন্ন মাফিয়াদের সখ্যতা তৈরি হওয়ায় এখন তার নিজস্ব বাহিনী তৈরি হয়েছে। এ কারণে জাহাঙ্গীর তার বিশ্বস্ত সহযোগীদের দিয়ে সকল অপকর্ম পরিচালনা করেছে।

জাহাঙ্গীরের হয়ে গার্মেন্টসের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন মহানগর আওয়ামী লীগের কথিত এক ক্যাডার নেতা বেনসন মুজিবর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আর এক দাপুদে নেতা হাজী মনির এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দাপুটে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর।

দুদকে করা আবেদনে জি কে বাবুল বলেন, জাহাঙ্গীরের সান্নিধ্যে থেকে এলাকায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর। এছাড়া জাহাঙ্গীরের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত আশরাফুল আলম রানা ওরফে রানা মোল্লা ইটাহাটা এলাকায় প্রাসাদপ্রমোদ বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের প্রকল্প তিনবার দেখিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন জাহাঙ্গীর। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে প্রকৌশলী দেলোয়ারকে প্রাণ দিতে হয়।

দেলোয়ার হত্যার পর জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সুন্দর মনির ওরফে কিলার মনির কিছুদিন গা-ঢাকা দেন। জাহাঙ্গীরের অপকর্মের অংশীদার হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাহাঙ্গীরের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎও করেন মনির।

এছাড়াও জি কে বাবুল আবেদনে অভিযোগ করেন, জাহাঙ্গীর কৌশলে গাজীপুরের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও টঙ্গী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সুকৌশলে দাওয়াত দিয়ে তার উত্তরার একটি বিশেষ প্রমোদ বালাখানায় নিতেন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ নারীদের দিয়ে আপ্যায়ন করাতেন এবং সেগুলো গোপন সিসি ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, জাহাঙ্গীর গাজীপুরের মেয়র হওয়ার পর ঠিকাদারি কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন প্রকৃত যোগ্য ও সৎ ঠিকাদাররা। তিনি দলীয় বিলবোর্ড সিটি করপোরেশনের টাকায় তৈরি করে তার প্রচারণা চালাতেন।

এছাড়া দাতব্য সংস্থা জাহাঙ্গীর আলম ফাউন্ডেশন গড়ে তুলে চাঁদাবাজী ও লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। গাজীপুর মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডেই তাদের কার্যক্রম রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে কাজ করা পাঁচ শতাধিক ছেলেমেয়েকে সিটি করপোরেশন থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বেতন দেন বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর।

এছাড়াও আবেদনকারী জি কে বাবুল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদে শত-শত চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ দেওয়া, ভারত ও দুবাইয়ের একটি মাফিয়া গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো ষড়যন্ত্র, বিএনপি ও জামায়াতকে অতি গোপনে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগের কথাও বলেছেন।

জাহাঙ্গীরের অর্থ পাচারের সহায়তাকারী ও অনেক ঘটনার সাক্ষী সুমন, সুন্দর মনির, আশরাফুল, সোহাগ, কামরুল ইসলাম, রানা মোল্লা, ও গ্রাইম ইন্সুরেন্সের ডিএমডি দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনের আওতায় আনলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে বলেও তিনি তুলে ধরেছেন আবেদনে।

বিশেষ করে জাহাসীরের দেহরক্ষী আশরাফুল আলম রানা ওরফে রানা মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাহাঙ্গীরের কোথায় কি সম্পদ এবং কতজন অস্ত্রধারী ক্যাডার আছে এবং কি পরিমান অস্ত্র ও মাদক কারবার আছে সেসব বিষয়ে জানা যাবে।

জাহাঙ্গীরের কথিত ক্যাশিয়ার সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাহাঙ্গীরের না জানা অনেক তথ্য ও সম্পদের হিসাব পাওয়া যাবে। এছাড়া জাহাঙ্গীরের শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও তার কথিত ভাই সুন্দর মনির ওরফে কিলার মনিরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে।

উল্লেখিত এই ব্যক্তিদের বিদেশ গমণে নিষেধাজ্ঞার আবেদনও করেছেন জি কে বাবুল। জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারসহ তার সহযোগী ও দোসরদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগসহ সকলের সম্পদের হিসাব নিয়ে, অবৈধ সম্পদগুলো বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দুর্নীতির অনুসন্ধান সবক্ষেত্রেই জটিল। এ ধরনের বিলম্ব অস্বাভাবিক নয়। অভিযোগের সংখ্যার তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও সক্ষমতার ঘাটতি এর অন্যতম কারণ হতে পারে।

তবে অনেক সময় সদিচ্ছা ও সৎ সাহসের অভাব এরূপ অবস্থার পেছনে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় বা অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে দুদক প্রভাবিত হয়। ব্যাপক আলোচিত এ ক্ষেত্রে এমন ঘটছে কি না প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মানুষের আস্হা অর্জনের স্বার্থে দুদকের উচিত হবে আইনের চোখে সবাই সমান বিবেচনায় কোনো প্রকার ভয় বা করুণার ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্রিয় থাকা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটির মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে একই বছরের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।