এস এ আখঞ্জী,তাহিরপুরঃ-
কথা আছে, যুদ্ধই জীবন,আর এই বাক্যের পুরোপুরি অর্থ, বাস্তব রুপে সম্মুখীন হন, হাওর পাড়ের দরিদ্র জেলেরা। গ্রীষ্ম বা বর্ষায় যেকোনো ঋতুতেই,
প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের মাধ্যমে, জীবন- জীবীকা নির্বাহ করে তাঁরা । তাদের দৈনন্দিন জীবনটাই এক রণক্ষেত্র।স্ত্রী,পুত্র,স্বজনদের লালনপালনের তাগিদে,
তীব্র শীত কিংবা ঝড় -বৃষ্টি, তুফানকে উপেক্ষা করে,সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যেতে হয়, হাওর কিংবা বিলে। হাতে বৈঠা, কাঁধে জাল, ছাইঁ ফেলতে জলে, জীবন ঝুঁকি নিয়ে সারা রাত পোহাতে হয়, মৎস্য শিকারে ।শরীরের সর্বাঙ্গের কাঁপনিতে যখন শরীর স্তব্ধ। ঠিক তখুনি ভোরের কাক ডাকা শুরু,এসময় জাল, ছাইঁ তল্লাশী করে, মাছ সংগ্রহ করে, ভেজা কাপড়- ছোপর নিয়ে,বিক্রয়ের জন্য যেতে হয়, হাট কিংবা বাজারে। বিক্রয়ে যাহা আয় হয়। তা দিয়েই কোনো রকমে চলে জেলেদের পরিবার।
এ সামান্য আয় দিয়ে পরিবারের, অন্ন -বস্ত্র যেগানে হিমসিম পোহাতে হয়। যে কারণ,ছেলে- মেয়েদের শিক্ষা- দীক্ষা প্রাতিষ্ঠানিকসহ বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক সমূহের খরচ চালানো কষ্ট দায়ক হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে সন্তানাদিকে নিজ পেশার দিকে উৎসাহিত করেন তাঁরা । অজান্তেই অন্ধকার পথে ঠেলে দেন, ছেলে মেয়েদের ভবিষ্য।আর অকালেই ঝড়ে পড়ে শিক্ষার জীবন থেকে। বংশ, বংশাধারায়, নিরক্ষরতার চাদরে ডাকা পড়ে জেলে পাড়া- শিশু কিশোরে জীবন । আর শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয় না।
অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ।আর্থিক অভাব – অনটন লেগেই থাকে। অভাব নামক দানবকে পরাজিত করতে, স্বচ্ছতার আশায়, অধিকাংশই মৎস্য জীবীর ছেলেরা, বই- কলম ছেড়ে, নিরক্ষরতার জগতে অজান্তেই হাড়িয়ে যায়। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে, ওঁরা অস্থির।
অপরিকল্পিত ভাবে, কর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করে । যার ফলে জনম জনম ধরে হয় পরাজিত। সুখ নেই, ওদেরর ললাটে। এক পেশায় পারদর্শী হওয়ায়, অন্য কোন পেশার কৌশল না জানায় জীবীকা আহরণে হয় ব্যর্থ। বাধ্য হয়েই, হাতে বৈঠা,কাঁধে মৎস্য সরঞ্জাম নিয়ে,রাতের আধারে ছুটে যেতে হয়। আদি পেশায় মৎস্য আহরণে। এতে যাহা আয় হয়, তা দিয়ে চলে ক্ষুধা নিবারণ। সমাজের কাছে ওঁরা নিন্ম পেশার সম্প্রদায়। এর প্রভাব পড়ে তাদের জীবনে,যার কারণে সব ক্ষেত্রে
অবস্থান পায় না। যার ফলে পদে পদে ব্যর্থ হয়, মৌলিক অধিকার থেকে, আর চিরকাল বঞ্চিত হয় তাঁরা।
স্বাবলম্বী না হওয়ার পথে ওঁরা নিজেরাই দায়ী। মৎস্য প্রজন্ম কালেও, মা মাছসহ পোনা মাছ নিধনযজ্ঞে মেতে উঠে। সরকারি নিষেধাঞ্জা না মেনে, অপরিকল্পিত ভাবে বার মাস মৎস্য আহরণ করে। যার কারণে সারা বছর প্রাপ্য মাছ ধরতে ব্যর্থ , প্রাপ্য আয় থেকে হয় বঞ্চিত। বার মাস মাছ ধরেও সুখের ছোঁয়া জুটেছি ওদের ললাটে।
বাংলাদেশ সরকার সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে দরিদ্র মৎস্য জীবীর জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় জনবল নিয়োগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, হাওর পাড়ের মৎস্য জীবীদের। সমিতিকে পুঁজি করে বিত্তশালীরাই অর্থের পাহাড় গড়েছেন।
সঞ্চয় বিমুখ আর দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে নিজেদের সংগঠনের লাভ ছেড়ে দিয়ে কাঙ্গাল ভোজে ব্যস্ত জেলেরা। তবে ব্যর্থতার জন্য, ওরাই শুধু দায়ী নয়। সংগঠন সুসংগঠিত করতে সরকারের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদাসীনতার কারণে ওদের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটেনি।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা নিন্মাঞ্চল,শনি, মাটিয়ান, টাংগুয়ারসহ অনেক গুলো হাওর- বাওর, দু-তিনটি নদ- নদীর কূল ঘেঁষেই প্রাচীন জনবসতি । এখানকার অধিকাংশ বসতির প্রধান আয়ের উৎস মৎস্য আর কৃষিতে। কিছু কিছু আছে সরাসরি মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল। ওদের মধ্যে দরিদ্র মৎস্য জীবন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, বর্ষার থইথই জল, বাওরে উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে তিন তকতার নৌকা ভেঙে তছনছ হতে পারে
জীবন নামের চাকা। তবুও জীবন ঝুঁকিতে নিন্ম আয়ের পেশাতে রয়ে গেছে তারা। অস্বচ্ছতার ফলে এলোমেলো, অপরিস্কর- অপরিচ্ছন্ন, দেখে মনে হয়, এ যেন এক যাযাবর ।
কথা হয় মাটিয়ান হাওর পাড়ের মৎস্য জীবী (শিবরামপুর গ্রাম)’র আসাদ নূর এর সাথে তিনি জানান, আমি বার মাস মাছ ধরে সংসার চালাই, আর কোনো কাজ-কাম জানিনা। এছাড়া আমি হাঁফানি রোগের রোগী, ছেলে ও নেই। থাকলে সহযোগীতা করতে পারতো, তা-ও কপালে জুটে নি।
রয়েছে তিনটি মেয়ে, তাদের ভরনপোষণ করতে, বাধ্য হয়েই রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে
হাওরের প্রাণে ছুটে যায় জাল ফেলতে জলে । এছাড়া অন্যকোনো কাজ করতে পারিনা। পাথনি জাল পেলে মাছ ধরি।যতটুকু আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। সমবায় সমিতিতেও আমাকে রাখা হয়নি। টাকা পয়সা দিতে পারিনি বলে। আর এসব করে কি লাভ। কেউ ত লাভবান হতে দেখিনি। তিনি আরও বলেন, আমাকে কোনো সরকারি অনুদান দেওয়া হয় না। দয়ালেই আমার ভরসা।
এ ব্যাপারে, তাহিরপুর উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা আশীষ আচার্যা বলেন,জাল যাঁর, জলাশয় তার, এই নীতি বাস্তবায়ন করতে,
মৎস্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে হাওর-বাওর, বিল- ডোবার, ইজারা প্রদান করা হয়, মৎস্যজীবীদের মাঝে । সমবায় অধিদপ্তর উদ্বুদ্ধ করণে কাজ করে,বাস্তবায়নে মৎস্য জীবীরাই, সঞ্চয় তহবিল গঠন করেন। তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি,বা মালিকের কাছে ইজারা নয়। আর যদি কোনো সমবায় সমিতির ট্রেন্ডার বিক্রয় করে। আর এ সবের তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। তা হলে ঐ সমিতির ইজারা বাতিল করা হয়। পূর্ণরায় ঢ্রেন্ডার বিঞ্জপ্তির মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। দরিদ্র মৎস্য জীবীর জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে, সরকারের এই পদক্ষেপ।।
তাহিরপুর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন,মাছ উৎপাদন ও আহরণ করে,দেশের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়েছেন মৎস্য জীবীরা।তাদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে, বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সরকার । মৎস্য প্রজন্ম কালে উপকূলীয় এলাকায় , যেসব মৎস্য জীবীরা, মাছ শিকার থেকে বিরত থাকেন। তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। কিন্তু এখানে আমি নতুন,, হাওর এলাকায় সহায়তা প্রদান করা হয় কি না তা আমি জানি না। তিনি আরও বলেন মৎস্য সমবায় সমিতির হাতে বিল, খাল, হাওর, ইজারা প্রদান করা হয়। শুধু মাত্র মৎস্য জীবীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে।কোনো ব্যক্তি বা মালিকানায় ইজারা প্রদান করা হয় না।