মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
সুগন্ধা আর বিশখালি নদীর ভাঙনে ৫০ বছর ধরে বিলীন হচ্ছে ঝালকাঠির বিভিন্ন জনপদ।নদী পাড়ের ২৫ গ্রামে তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হাজার হাজার পরিবার।দফায় দফায় বাড়ি ছেড়েও রক্ষা মিলছে না তাদের।আসন্ন বর্ষা মৌসুম নিয়ে শঙ্কায় নদী পাড়ের মানুষের চোঁখে ঘুম নেই।
এই নদী পাড়ের শতাধিক পরিবারকে কয়েক দফায় ভিটামাটি ছাড়তে হয়েছে।রাক্ষুসে নদী সব কিছু কেড়ে নেওয়ায় শত শত পরিবার আজ এলাকা ছাড়া।যারা রয়েছেন,তারাও ভাঙনে সব হারিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।এক সময়ের মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো নদীর ভয়াল গ্রাসে আজ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে।অভাব এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।ঝালকাঠি সদরের চরভাটারাকান্দা,সাচিলাপুর,দিয়াকুল,শেখেরহাট, কুতুবনগর নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি,খোজাখালি, মল্লিকপুর,সিকদারপাড়া,বহরমপুর,ষাটপাকিয়া,কাঠিপাড়া, মগড়-রাজাপুর উপজেলার পালট,বড়ইয়াসহ ৩০টিরও বেশি গ্রামকে নদী গ্রাস করছে ৫০ বছরেও বেশি সময় ধরে।
জেলার তিন উপজেলা লাগোয়া ৫ নদীর মোহনায় সুগন্ধা-বিশখালি নদী দুটির মিলনস্থল।আর এর আশপাশের গ্রাম গুলোর মানুষকেই প্রতি বছরই ভাঙনের সঙ্গে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কবলে পড়তে হয়।কিন্তু এত বছরেও ভাঙন রোধে এলাকা গুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভাঙনকূলের মানুষের চোখে মুখে আক্ষেপ আর বেদনার ছাপ তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে।
বিশখালি পাড়ের কৃষক আব্দুস মোতালেব বলেন, এই দিয়ে তিনবার ভিটা পরিবর্তন করেছি।বারবার ভিটা ছাড়ি আর নদী যেন ভাঙতে ভাঙতে পিছু নেয়।এটা এখন জীবনের এমন অধ্যায় হয়ে গেছে যা হয়তো কখনও আর শেষ হবে না।
নলছিটি উপজেলার বহরমপুর গ্রামের সোহাগ বিশ্বাস বলেন, আমার বাপ-দাদার সময় থেকেই রাক্ষুসী নদী গ্রাস করছে। এখনও ভেঙেই চলেছে।গ্রামের অনেক মানুষ নদী ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।শুধু ঘড়-বাড়ি না শতকে পর শতক ফসলি জমিও নদীর গ্রাসে চলে গেছে।এর থেকে রক্ষা পায়নি নলছিটি দপদপিয়া সড়কও।এই সড়কের অনেক জায়গা নদী গ্রাস করেছে।কর্তৃপক্ষ নামমাত্র ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছে।
চর সাচিলাপুর গ্রামের ফারুক হাওলাদার বলেন,আমাদের গ্রামের কমপক্ষে একশ পরিবার নদী ভাঙনে ভিটামাটি ছেড়েছে।তাদের কারো কারো ঠাঁই হয়েছে আবাসন প্রকল্পে। আবার কেউ কেউ শহরে রিকশা চালিয়ে কিংবা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।সরকারের উচিত ভাঙন কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো যাদের ঘরবাড়ি এখনো কোনোরকম টিকে আছে তাদের এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।এছাড়া যারা ভিটেমাটি হারিয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসন করা।
এ ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা বলেন,নদীর ভাঙন ঠেকাতে প্রথম পর্যায়ে ৭টি স্থানে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় ব্লক ডাম্পিংয়ের জন্য ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।অনুমোদন পেলে নদী পাড়ের মানুষজনকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা যাবে।আপাতত নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর সংলগ্ন এলাকায় কয়েক হাজার বালির বস্তা ফেলা হয়েছে।