মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
যুগ যুগ ধরে ভাঙছে নদী।নেই পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ।ঝালকাঠিতে নদী পাড়ের লাখো মানুষ ঝড় বন্যায় ভাসে।প্রতি বছরই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে জেলার হাজারো পরিবার।
সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত এবং চারদিকে নদী বেষ্টিত হওয়ায় ঝালকাঠি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ জেলা হিসেবেই পরিচিত। সিডর,আইলা,মহাসেন বুলবুল আর সিত্রাংসহ গত এক যুগে বন্যা ঝড়ে প্রাণহানি ও সম্পদ হারিয়ে দুর্যোগে তাণ্ডবের সাক্ষী এ জেলার মানুষ।কিন্তু দুর্যোগ মেকাবিলায় নদী পাড়ের মানুষের জন্য টেকসই ব্যবস্থা নেই মোটেও।বিশেষ করে বাঁধ না থাকায় কাঠালিয়া উপজেলায় যুগ যুগ ধরে ঝড় বন্যায় ভাসছে অসংখ্য মানুষ।
আর জেলা সদর,রাজাপুর এবং নলছিটি উপজেলায় নদী পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।ভেসে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত।জেলার সুগন্ধা,বিশখালি, আর গাবখান নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে যুগ যুগ ধরে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ।নদীর ভয়ানক গ্রাসে নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার।প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন আর জলোচ্ছ্বাসে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপ নেই বলে এলাকাবাসীর তীব্র ক্ষোভ।
কাঁঠালিয়া উপজেলার সুজন সভাপতি ফারুক খান বলেন, কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে রাজাপুরের জাঙ্গালিয়া নদী পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দাবি দীর্ঘ দিনের।কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।ফলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও পূর্ণিমার জোয়ারেও প্লাবিত হয় বিশখালি নদী পাড়ের ১৫টির বেশি গ্রাম।
জেলা সদরের গাবখান এলাকার কৃষক রইসউদ্দিন বলেন, এখানে নামমাত্র বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল।কিন্তু গত কয়েক বছরের দুর্যোগে তা ভেঙে গেছে।ফলে বন্যাসহ বিভিন্ন সময় পানি বৃদ্ধিতে পুরো এলাকা ভেসে যায়।ফসলের ক্ষেতসহ দুর্যোগে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছি।
জেলার সাচিলাপুর এলাকার তালাশ মাহামুদ বলেন, এ এলাকাটি সুগন্ধা, বিশখালি, বাসন্ডা, গাবখান আর ধানসিঁড়ি এই পাঁচ নদীর মোহনায়।ফলে যে কোন দুর্যোগে সবার আগে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই|এছাড়া এই পাঁচ নদীর নিকটবর্তী জেলা সদর, নলছিটি আর রাজাপুরের ১০টি গ্রামের মানুষ যুগ যুগ ধরে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আসলেও ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা বলেন, ভাঙন রোধে ১৩ কিলোমিটার ব্লক ডাম্পিংসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।
প্রসঙ্গত, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে মোট লোক সংখ্যা সাত লাখ।এর মধ্যে নদী নিকটবর্তী এলাকায় দুই লাখ মানুষের বসবাস।