মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো: ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বখাটেদের যন্ত্রণায় দু’দিনের ব্যবধানে বিষপানে ও ফাঁস দিয়ে দুই স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার(০৬ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে সুরাইয়া আক্তার (১৫) নামের এক শিক্ষার্থী বিষপানে আত্মহত্যা করে। এর আগে গত বুধবার নাসরিন আক্তার (১৩) নামের এক শিক্ষার্থী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
সুরাইয়া উপজেলার ছোনাউটা গ্রামের বাসিন্দা ও আমুয়া বাজারের চা দোকানী সিদ্দিক মোল্লার মেয়ে। সে আমুয়া বন্দর আমীর মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
অন্য ছাত্রী নাসরিন আক্তার উপজেলার উত্তর আউরা গ্রামের মো: নাসির হাওলাদারের মেয়ে। সে কাঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল|
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে আমুয়া শহীদ রাজা ডিগ্রি কলেজের শহীদ মিনার চত্ত্বরে গিয়ে সুরাইয়া বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়া তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র (আমুয়া) ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রতিবেশীরা জানান, পাশের দক্ষিণ মরিচবুনিয়া গ্রামের পান্না জোমাদ্দারের বখাটে ছেলে শফিক জোমাদ্দার (হুন্ডা রেন্ট-এ কারচালক) বিভিন্ন সময় ছাত্রী সুরাইয়াকে উত্যক্ত ও প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল|
অপর একটি সূত্র জানায়, শফিকের সাথে সুরাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন সকালে প্রেমিক শফিকের বাড়িতে অন্য এক প্রেমিকা ওঠে, এ খবরে অভিমানে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সুরাইয়া।
আমুয়া আমির মোল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: শামীম হোসেন জানান, সুরাইয়া মেধাবী হিসেবে মোটামুটি হলেও তার চলাফেরা ও আচারণ খুবই ভালো ছিল। যে কারণে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের কাছে সে প্রিয় ছাত্রী ছিল। সুরাইয়ার মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।
কাঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মুরাদ আলী জানান, এ ঘটনায় বরিশালে ময়নাতদন্ত শেষে কোতয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
অপর দিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় বখাটের উত্যক্ত সইতে না পেরে স্কুলছাত্রী নাসরিন আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
জানা গেছে, একই গ্রামের শাহজালাল আকনের বখাটে ছেলে সৈকত আকন স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে নাসরিনকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করত।
নাসরিনের মা চম্পা বেগম জানান, ‘আমার মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে সৈকত প্রায়ই বাজে কথা বলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করত। এ নিয়ে মেয়েটা সব সময় মানুষিক ভাবে চিন্তিত থাকত।ঘটনার দিন বিকালে আমি আমার বাবার বাড়ি বড় কাঠালিয়া যাই। নাসরিন এ সময় ঘরে একা ছিল। সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে এসে পিছনের বারান্দায় আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে নাসরিনকে ঝুলতে দেখতে পাই। আমার চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে।
কাঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান জানান, নাসরিন শান্ত-শিষ্ট ও নম্র-ভদ্র ছাত্রী ছিল। আমাদের কাছে উত্যক্ত করার কোনো ঘটনা সে কখনো জানায়নি বা অভিযোগ করেনি।
কাঠালিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বর) নুরুল আলম মিলু জানান, সৈকত নাসরিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ডিস্টার্ব করতেন। ঘটনার দিন মেয়েটির মা চম্পা বেগম তার বাবার বাড়ি ছিলেন। ঘর ফাঁকা পেয়ে সে আত্মহত্যা করে।
কাঠালিয়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ থানায় নিয়ে যায়।