বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধমকির মুখে ভীতসন্ত্রস্ত সাধারণ ভোটাররা। এভাবে চলতে থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ৯ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের শহীদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবেদীন চৌধুরী, জাকের পার্টির মোহাম্মদ যোবায়ের আল ভূঞার মাঠ পর্যায়ে কোনো প্রচার প্রচারণা দেখা যায়নি। নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের পোস্টারও চোখে পড়েনি। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মূর্তজা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে। এ ছাড়া আলমিরা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান রূপগঞ্জে গাজীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নামে পরিচিত।
রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বালু ভরাটের কাজ করেন হাবিব। তিনি বালু হাবিব নামে বেশি পরিচিত।
এদিকে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীকে অংশ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া।
স্থানীয়রা বলছেন, শাহজাহান ভূঁইয়াকে চাপে রাখতে এরই মধ্যে তাঁর কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে। শাহজাহান ভূঁইয়া ও গোলাম দস্তগীর গাজীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও নির্বাচনে ভালো অবস্থানে আছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।
নির্বাচনের হালচাল নিয়ে কথা হয় গোলাকান্দাইলের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল গনির সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তিনজন। বাকিরা তো ‘ডামি প্রার্থী’। মন্ত্রীর নিজের ছেলে কিভাবে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে? সবই সাজানো নাটক! নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখল করতে এমন কৌশল।
কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় রিকশাচালক জসিমের সঙ্গে। জসিম বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ আছে। কিন্তু ভয়ে আছি। যদি মরামারি হয়, তাহলে যাব না।’
জানা যায়, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রূপগঞ্জের ভোটের মাঠও গরম হচ্ছে। এরই মধ্যে গতে ২ জানুয়ারি নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, পিপিএম (বার) ও রূপগঞ্জের ওসি দীপক চন্দ্র সাহার ওপর অনাস্থা এনেছেন স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী। ওই দিনই প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও রূপগঞ্জের ওসির নেতৃত্বে রূপগঞ্জের নির্বাচন পরিচালিত হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এভাবে চলতে থাকলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহস পাবেন না। নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও নারায়ণগঞ্জের ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এ ছাড়া রূপগঞ্জের বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের আশপাশে গোলাম দস্তগীর গাজী সমর্থিত সন্ত্রাসীদের বাড়িতে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাউন্ড গ্রেনেড ও ককটেল তৈরি করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীকে অংশ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ আছে। তাঁরা আমাকে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা ভোট দিতে আসবেন কি না তা নিয়ে আমি সন্দিহান।’
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করে প্রয়োজনে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে পুরো ভোটপ্রক্রিয়া বানচাল হবে। এখনই গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীদের থামানো না গেলে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না।
একই আশঙ্কা প্রকাশ করে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ভোটাররা ভোট দিতে এলে গোলাম দস্তগীর গাজীর পরাজয় নিশ্চিত। তাই তাঁরা ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন। তাঁর কর্মীরা জনসভায় বলেছেন, নৌকায় ভোট না দিলে চিহ্নিত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘গোলাম দস্তগীর গাজীবিরোধী নির্বাচনী প্রচারণা করলেই রাতের আঁধারে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার বেশ কিছু ক্যাম্পেইনারকে মারধর করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার প্রশ্ন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর এসব সন্ত্রাসী কি আইনের ঊর্ধ্বে?’
রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘৭ তারিখের নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে। এসংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনা আছে। আশা করি, শান্তিপূর্ণভাবে সবাই ভোট প্রদান করবে। এ ছাড়া কারো পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’