আরিফুল ইসলাম রিয়াজ, মোল্লাহাট বাগেরহাটঃ
বাগেরহাটের মোল্লাহাটে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অসহায় একটি পরিবারকে বসতবাড়ি থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদে সীমাহীন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনার প্রতিকার – ন্যায় বিচার দাবিতে সংশ্লিষ্ট দ্বারে দ্বারে ঘুরছে উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নের সরসপুর গ্রামের ভুক্তভোগী ওই পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবারটির প্রধান অসুস্থ অসহায় শ্যামল রায়ের অভিযোগে জানা যায়, তার চাচাতো ভাই হারান রায়ের থেকে ১৪.৬৬ শতাংশ জমি বিগত ১৯৯৬ ইং সালে তৎকালীন বাজার মূল্য ৬৫ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করে ক্রয় করেন তিনি। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ওই গ্রামের ভজন কুমার রায় (কলেজ শিক্ষক), বিবেকানন্দ চৌধুরী (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) ও রসময় রায়। এদের মাঝে রসময় রায় মৃত্যু বরণ করেছেন।
অনিবার্য কারণে ওই সময় দলিল না হলেও তাকে দখল বুঝিয়ে দেয় হারান রায়। এরপর ২০০১ ইং সালে উক্ত জমিতে বসতবাড়ি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একমাত্র আবাস স্থলে বসবাস করছেন শ্যামল রায়। পরবর্তীতে ওই জমির দাবিতে একই গ্রামের গিরিশ চন্দ্র হিরা গং (অন্য লোক) মোল্লাহাট সহকারী জজ আদালতে দেঃ ০৬/০৯ নং মামলায় করে। সম্পূর্ণ নিজ খরচে উক্ত মামলা পরিচালনার পর গত ২০১৫ ইং সালে গিরিশ চন্দ্র হিরা গং’দের পরাস্ত করে জমির মালিক পক্ষে আদালতের রায় করাতে সক্ষম হন শ্যামল রায়। এরপর থেকে শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করছেন তিনি। সম্প্রতি ওই জমি অন্যত্র বিক্রির গোপন ষড়যন্ত্র করে হারান চন্দ্র রায়। বিষয়টি জানতে পেরে মোল্লাহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন শ্যামল রায়। এছাড়া বাগেরহাট আদালতে ন্যায় বিচার দাবিতে একটি মামলাও করেন। উক্ত মামলার কপি সংযুক্ত সহ অবৈধ দলিল বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট মোল্লাহাট সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট লিখিত আবেদন করেন শ্যামল রায়। এরপরও মোল্লাহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সম্প্রতি উক্ত অবৈধ দলিল সম্পাদন করা হয়। ওই দলিলের গ্রহীতা সরসপুর গ্রামের দিন আলী সরদারের ছেলে রমজান সরদার গং প্রকাশ্য সীমাহীন দৌরাত্ম সৃষ্টি করছে। যার ধারাবাহিকতায় এমাসের প্রথম দিন গভীর রাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে অনধিকারে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রকার ফলদ ও বনজ গাছ কেটে ক্ষতি সাধন সহ কাঠ – বাঁশের ফ্রেমে চার চালার একটি টিনের ঘর তোলে। শ্যামল রায় আরও বলেন, পূর্বে থানায় করা তার অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমিনকে রাতেই ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি বলেন, রাতে আসা যাবে না, সকালে আসবেন, এরপর সকালে যথারীতি আসলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রমজান সরদার গং দের সাথে চলে যান। এছাড়া আমাকে দিয়ে জোর পূর্বক আমার জমির একাংশের বেড়া খুলে দিতে বাধ্য করেন এসআই আল আমিন। তিনি এসকল ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিচার দাবি করে বলেন, আমি নিতান্তই অসহায় গরীব ও অসুস্থ। অভাবের কারণে অপারেশন করতে না পেরে ক্যাথেটার নিয়ে চলছি প্রায় একবছর যাবৎ। অভাবী মানুষের বিচার পাওয়া এতোটা কঠিন তা আগে বুঝতে পারিনি। তাই আমার এমপি জনদরদী শেখ হেলাল উদ্দীন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যে ন্যায় বিচার পেতে চাই। এছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে অঝোরে কেঁদে ফেলে শ্যামল রায়।
এবিষয়ে প্রত্যক্ষ সাক্ষী ভজন কুমার রায় (কলেজ শিক্ষক) বলেন, অনেক চাপ আছে তাই, গ্রামের মাতব্বরদের উপস্থিতি ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না। তবে, তিন জনে একসাথে শ্যামলের সাথে গিয়ে হারান রায়ের কাছে জমির বায়না নগদ টাকা দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
সাক্ষী বিবেকানন্দ চৌধুরী (প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) জানান, আমি সহ তিনজন একসাথে যাই এবং হারান রায়ের নিকট চল্লিশ হাজার টাকা হস্তান্তর করে ভজন কুমার রায়।
এ বিষয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আল আমিন বলেন, কোন পক্ষই তার আত্নীয় না, তাই কারো পক্ষে কিছু করা হয়নি।