মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
তীব্র শীতে বরিশালে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে গত সাত দিনে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিউমোনিয়া,ডায়রিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে শতাধিক শিশু।এরই মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ইউনিটে বেড সংকটের কারণে বাবা-মায়ের কোলে কোলে চলছে শিশুদের চিকিৎসা।
হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা না থাকায় মেঝেতে এবং এক বেডে দুই-তিন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।ঠান্ডাজনিত রোগে অস্বাভাবিক হারে শিশু আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।ফলে বিকল্প ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স সুপ্তি জানিয়েছেন,শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়েদের অবহেলার কারণে নিউমোনিয়া,ডায়রিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।তবে আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না।পল্লী চিকিৎসক থেকে শুরু করে ফার্মেসি থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।যখন দেখছেন শিশুর অবস্থা খুব খারাপ তখন হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। অথচ আগে ভাগে শিশুকে হাসপাতালে আনলে মৃত্যু হতো না। এখন যেখানে পাঁচ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত চিকিৎসা লাগছে, আগে ভাগে আনলে দুই-তিন দিনে শিশুরা সুস্থ হয়ে যেতো।
সুপ্তি আরও জানিয়েছেন,আগে মায়েরা যেভাবে শিশুদের সেবা করতো শীতে সেই সেবায় শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব নয়।এজন্য মায়েদের কাউন্সিলিং করা হচ্ছে।শীতে শিশুদের সেবা বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি তাদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।মায়েরা যত্নবান হলে শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব।নিউমোনিয়া,ডায়রিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে শতাধিক শিশু।
সুপ্তি বলেন, ‘মূলত মায়েদের অবহেলার কারণে বেশিরভাগ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অস্বাভাবিক হারে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেড সংকটে পড়তে হয়েছে আমাদের। এজন্য এক বেডে দুই-তিন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।কারণ হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা নেই।যারা বেড পায়নি তাদের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।এদের মধ্যে কেউ কেউ কোলে কোলে রেখে তাদের শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করাতে আসা ফারহা বেগম বলেন, ‘দুই দিন হয়েছে শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।কিন্তু বেড সংকট থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।মেঝেতে রাখলে শিশু আরও অসুস্থ হতে পারে এজন্য কোলে কোলে রাখছি।কিছুক্ষণ আমি ও কিছুক্ষণ শিশুর বাবা কোলে রাখছেন।তবে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিলেও প্রতিদিন একবারের বেশি চিকিৎসকের দেখা মিলছে না।বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাতে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের চিকিৎসক পেতে শনি ও রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে আসা বাবা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বেড সংকটের বিষয়টি আমরা দেখতে পাচ্ছি।এ নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।তবে দুই বেলা চিকিৎসক পেলে ভালো হতো।চিকিৎসকদের ওপর আমাদের যে আস্থা তা ইন্টার্ন চিকিৎসক কিংবা নার্সদের ওপর নেই। আমরা চাইলে চিকিৎসকের দেখা পাই না। চিকিৎসকের দেখা মিললেও তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না।কিছু জিজ্ঞাসা করলে রেগে যান। চিকিৎসক রেগে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্ন ও নার্সরা খারাপ ব্যবহার শুরু করেন।এসবের প্রতিবাদ করার মতো সাহস নেই আমাদের।
শিশু ওয়ার্ড সূত্র থেকে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে গত সাত দিনে প্রতিদিন একজন করে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
একই সময়ে শিশু ইউনিটের তিনটি ওয়ার্ড এবং আইসিইউতে ৮০০ শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।শিশু ইউনিটে ১০৭টি বেডে চলছে চিকিৎসা।এখন ভর্তি আছে ১৬৭ শিশু।প্রতিদিন শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক সংকট।ফলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা না থাকায় মেঝেতে এবং এক বেডে দুই-তিন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত কারণে অস্বাভাবিক হারে শিশু আক্রান্ত হওয়ায় শিশু ইউনিটের তিনটি ওয়ার্ডে জায়গা হচ্ছে না। এজন্য প্রতিটি বেডে দুই-তিন জন করে শিশু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য সার্জারি ওয়ার্ডে বিকল্প ১০০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে।দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে শিশুদের স্থানান্তর করা হবে।
চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে পরিচালক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসক দেওয়া হলে যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা আর থাকবে না।