সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন

বরিশালে প্রেমিক এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক স্বামীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে 

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১২৯ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

বরগুনার আলোচিত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির ঘটনা সবার জানা।স্বামী রিফাত শরীফকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি।সেই মিন্নিরই যেন আরেক রূপ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এলাকার সৌরভ বেপারীর স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মুসকান।স্বামীকে হত্যার জন্য চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে প্রেমিক ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে কুপিয়েছেন তিনি।তবে ব্যর্থ হয়েছেন।আহত সৌরভ বেপারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উচ্চাবিলাসী আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে স্বামীর আর্থিক অবস্থা পছন্দ না হওয়ায় স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার জন্য পরিকল্পিত ভাবে রাবেয়া আক্তার মুসকান এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাবেয়া আক্তার মুসকান,তার প্রেমিক আবু সাইদ সিয়াম,সহযোগী জিহাদ হাসান ও রায়হানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার বলেন,সাড়ে চার মাস আগে সৌরভ বেপারীর সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় রাবেয়া আক্তার মুসকানের। বিয়ের আগে সৌরভ বেপারী নিজেকে সরকারি চাকরিজীবী বললেও মুসকান জানতে পারেন তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন।পরে মুসকান স্বামীর কাছ থেকে তালাক নেওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং তার সাবেক প্রেমিক আবু সাইদ সিয়ামকে বিষয়টি জানান। স্বামীকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তালাক নেওয়ার জন্য মুসকান তার প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন।

এদিকে ২৪ জানুয়ারি সৌরভ ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়ি আসলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রেমিক সিয়ামকে সহযোগী ও অস্ত্রসহ গৌরনদী আসতে বলেন মুসকান।২৫ জানুয়ারি দুপুরের খাবারের পর স্বামীকে ভিটামিন ওষুধ বলে দুটি চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেন।এরপর স্বামীকে নিয়ে পার্লারে ও গৌরনদী বাজারে শপিং করতে যান।পার্লারে ঢোকার সময় স্বামীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল নিয়ে প্রেমিককে ঘটনাস্থলে এসে তাদের অনুসরন করতে বলেন মুসকান।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সৌরভ বেপারী অসুস্থ হয়ে পড়লে দুজনে অটোরিকশায় চড়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে মুসকান তার বান্ধবীর বাড়িতে যাবেন বলে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় হাঁটতে থাকেন।তারা কালনা এলাকার শামসুল হকের বাড়ির পূর্ব পাশে পৌঁছালে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসকানের প্রেমিক সিয়াম ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সৌরভ কোপায়।চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানো স্বামীকে অসুস্থ অবস্থায় যখন কোপানো হচ্ছিল তখন মুসকান পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।পরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন,পরিকল্পনাকারী এবং হামলাকারী সকলেই পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।প্রথমে হামলাকারী শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।আহত সৌরভ এতটাই গুরুতর ছিলেন যে তার কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না।তবে সৌরভের স্ত্রী মুসকানের রহস্যজনক আচরণ এবং বিভ্রান্তকর তথ্য দেওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়।তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি পুরো পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেন।তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকেসহ প্রথমে দুইজন এবং সর্বশেষ গতকাল (৩১ জানুয়ারি) দুইজনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারের পর জানা গেছে,হত্যাচেষ্টাকারীরা সকলেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।

পুলিশ সুপার বলেনঘটনাটি ঘটেছে ওই গৃহবধূর উচ্চাবিলাসী মানসিকতার জন্য।সৌরভ এখন বেঁচে আছে,নয়তো বরগুনার মিন্নির ঘটনার মতো এটিও সমান্তরাল।পুরো ঘটনা পরিকল্পনা অনুযায়ী নিখুঁত ভাবে করেছে।মুসকান চেয়েছিল তার স্বামীকে হত্যা করা হলে সে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধবে।

গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন,স্বামীকে দুর্বল করার জন্য প্রথমে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়েছে।পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হামলাকারীদের ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছে। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল হত্যার। আল্লাহর অশেষ রহমতে সৌরভ বেঁচে গেছেন। আমরা গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করেছি। তারা আমাদের কাছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মুসকানের প্রেমিক আবু সাইদ সিয়াম বলেন, আমাকে ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছে মুসকানের স্বামীকে কোপানোর জন্য। আমরা মুসকানের নির্দেশে তার স্বামীকে কুপিয়ে জখম করি। সেও চেয়েছিল যেন কুপিয়ে সৌরভকে হত্যা করি। এজন্য প্রথমে কুপিয়ে জখম করার পর আমাকে আবারো কোপাতে বলে।তবে ততক্ষণে লোকজন এসে পড়ায় আমরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হই।

মুসকানের একটি ভিডিও স্বীকারোক্তিতে দেখা গেছে, পুরো পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন তিনি। মুসকান বলেন, আমি খুন করতে বলিনি।বলেছি ভয় দেখাতে,যেন আমাকে তালাক দেয়।

আহত সৌরভের বাবা কবির বেপারী বলেন, মাত্র সাড়ে চার মাস আগে বিয়ে হয়েছে।আমি কখনো ওর শ্বশুরবাড়ির লোকদের বলিনি যে আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে। বলেছি গাড়ির ড্রাইভার।আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার পরিকল্পনা পুত্রবধূ করেছে তা কেউ বুঝতে পারিনি। তবে যখন আমি আহত ছেলের কাছে যাই তখন পুত্রবধূর আচরণে মনে হয়েছে সে জড়িত থাকতে পারে।

তিনি বলেন, আমার নির্দোষ ছেলেকে এভাবে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আমি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।