মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
বিগত চারদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে।আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ সন্নিকটে।আবহাওয়া তরঙ্গে দিনদিন এ তাপমাত্রা আরো নামার পূর্বাভাস দিচ্ছে।শীতের প্রকোপ বাড়ায় শীতবস্ত্রের দোকান গুলোও জমজমাট হয়ে উঠেছে। শুধু দোকান নয় মৌসুম ভিত্তিক গড়ে ওঠা ‘বরিশালের গুলিস্তান’ মার্কেটেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন,মৌসুমের সেরা সময় পার করছেন তারা। আর ক্রেতারা বলছেন,সাধ্যের মধ্যে শীতের পোশাক পাওয়ায় এখানে না এসে উপায় নেই।দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে ভিড় লেগেই থাকে।
সাধারণত বরিশাল নগর ভবনের প্রধান ফটকের বিপরীতে এবং জেলা পরিষদের পুকুরের পাড়ে ব্যবসায়ীরা ভ্যানে পোশাক সাজিয়ে সেগুলো বিক্রি করেন।শতাধিক ভ্যানে সাজানো পোশাকের মধ্যে শীত পোশাকের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া দোকানীরা সেখানে নিজস্ব উদ্যোগে রাতে আলোর ব্যবস্থা করেছেন।শতাধিক ব্যবসায়ীর এ মার্কেটটি সাধারণত কালেক্টরের পুকুর পাড়ের দোকান হিসেবে পরিচয় পেলেও, গত দুই-তিন বছর ধরে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে বরিশালের গুলিস্তান নামে।
এদিকে অস্থায়ী মার্কেটের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, আমরা সারা বছরই এখানে ভ্যানে বিভিন্ন ধরণের পোশাক বিক্রি করি।মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে এসব পোশাক তুলি। তবে শীত এলে বিক্রি বেশি হয়।মূলত এসময়ের ব্যবসাই আমাদের প্রধান ব্যবসা।
আরেক বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন,আমাদের ক্রেতা সাধারণ দরিদ্র শ্রেণির।আমরা যেমন পথের ধারের ব্যবসায়ী তেমনি আমাদের পণ্যও গরিব মানুষের জন্য।এখানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মালামাল পাওয়া যায়। ঢাকা গুলিস্তানের মতো এখানেও দরদাম করে কেনাবেচা চলে।এজন্য অনেকেই আমাদের গুলিস্তানের দোকানী বলেও ডাকে।
ব্যবসায়ী হুমায়ুন বলেন, ঢাকা থেকে লটে মালামাল ক্রয় করে এখানে নিয়ে আসি।এসব মালামাল কারখানা থেকে বিক্রি হয়নি বা ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যেকোনো কারণে কিনে নেয়নি। তাই এগুলো ব্যবহার উপযোগী। গুলিস্তানের মতো আমরাও এখানে ক্রেতাদের ডেকে ডেকে পোশাক বিক্রি করি। কয়েকদিন ধরে বিক্রি বেড়েছে। আশা করছি লাভও ভালো হবে।
ছেলে-মেয়েদের জন্য পোশাক ক্রয় করতে আসা তামান্না বলেন,অল্প টাকায় সবার জন্য এখান থেকেই কয়েক বছর ধরে কিনছি।মার্কেটে গেলে তারা এসি বিলও রাখে। এখানে তার ঝামেলা নেই। আমরা দেখে-শুনে দরদাম করে ক্রয় করছি।
আরেক ক্রেতা শামীম মিয়া বলেন, আগে মহসিন মার্কেট থেকে শীতের পোশাক কিনতাম। তখন মহসিন মার্কেটকে গরিবের মার্কেট বলা হতো। এখন সেখানেও ‘একদর’। তবে দরদাম তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় বরিশালের গুলিস্তান থেকে পোশাক ক্রয় করছি।এছাড়াও শো-রুম থেকে শীতের পোশাক পড়তে আমারও মত চায়, কিন্তু তাতে যে দাম একটি কিনলে পরিবারের অন্যরা কিছু পাবে না। তাছাড়া এক বছরইতো এগুলো ব্যবহার করবো।
এছাড়াও হাজী মুহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেট, সিটি মার্কেটেও পোশাকের দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এ দুটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মালামাল উঠানো হয়েছে। শীত জেঁকে বসায় ক্রেতাও বেড়েছে।
সিটি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহিদুল্লাহ কবির বলেন, ১২৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মার্কেটটি বেশ সুনামের সাথে সব বয়সী ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে পোশাক বিক্রি করে আসছে। শুধু পোশাক নয় জুতা, ব্যাগসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যও বিক্রি করা হয়। শীতকালে শীতের পোশাকের চাহিদা বেশি থাকায় এখন মার্কেটটি জমজমাট হয়ে উঠেছে। আশা করছি এ মৌসুমে খুব ভালো বিক্রি হবে।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখর দাস বলেন, এখানে ২২০টি পোশাক এবং জুতার দোকান রয়েছে। এটি বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেট। আশা করছি এবছর শীতের প্রকোপের ওপর ভিত্তি করে লাভবান হতে পারবে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ জানিয়েছেন, বরিশালে তৃতীয় দিনের মতো ধারাবাহিকভাবে তাপমাত্রা কমেছে।বুধবার ১৩ দশমিক ১, বৃহস্পতিবার ১২ দশমিক ৬ এবং শুক্রবার ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।তবে এ তাপমাত্রা আরো কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।