শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জাগৃতি কার্যকরী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ শপথ গ্রহণ ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

শীর্ষ তিন আক্রান্ত অঞ্চলে চট্টগ্রাম

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১৫০ বার পঠিত

মুন্নি আক্তার,নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাপানিজ এনকেফালাইটিস ছড়ায় কিউলেক্স মশার কামড়ে, ১৫ বছরের কম বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত মে থেকে ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব বেশি।

ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি মশাবাহিত রোগের মধ্যে আরেক আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে জাপানিজ এনকেফালাইটিস। মূলত কিউলেক্স মশার কামড়ে এ রোগটি ছড়ায়। মারাত্মক এ রোগে আক্রান্ত প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যু ঘটতে পারে। সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হলেও ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। হিসেবে রোগটিতে মোট আক্রান্তের চার ভাগের তিন ভাগই এ বয়সী। এ রোগে আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনে রয়েছে চট্টগ্রাম।

‘জাপানিজ এনকেফালাইটিসের ঝুঁকি, বিস্তার, প্রতিরোধ ও টিকা বিষয়ে অবহিতকরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘মা, নবজাতক শিশু এবং কিশোর–কিশোরীর স্বাস্থ্য’ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয় কর্মশালায়। দেশে গত দশ বছরে জাপানিজ এনকেফালাইটিস সংক্রমণের পরিসংখ্যান (চিত্র) তুলে ধরা হয়েছে জরিপে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল রংপুর বিভাগ। এ অঞ্চলে ৪৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৩০ শতাংশ রোগী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রাজশাহী অঞ্চল। শীর্ষ তিনে রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। এ অঞ্চলে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ রোগে আক্রান্ত প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যু হতে পারে। আক্রান্ত অন্যদের মাঝেও ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগী শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে যেতে পারে। সব বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। তবে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। হিসেবে আক্রান্ত প্রতি চারজনের তিনজনই শিশু।

কিউলেক্স মশার কামড়ে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগ মস্তিস্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত মশার কামড়ের ৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা) ও অজ্ঞান হওয়া। এসবের মধ্যে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা) ও অজ্ঞান হওয়া উপসর্গকে গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গুরুতর এসব লক্ষণযুক্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় চট্টগ্রামে রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, সব হাসপাতালে রোগটি নির্ণয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। দেশের ৮২টি সরকারি ও ২১টি বেসরকারি হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা চলছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে মোট ১৭ হাজার ৩৪৯ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নেয়। এর মাঝে ৬৮৪ জন রোগী খিঁচুনি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২১৭ জনের জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগ শনাক্ত হয়। তবে রোগ নির্ণয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সন্দেহজনক আরো অনেক রোগীর এ রোগ শনাক্ত করা যায়নি।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম কর্মশালায় বলেন, মশাবাহিত জাপানিজ এনকেফালাইটিস অনেকটা নীরবেই আক্রান্ত করে চলেছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ভাইরাসে সংক্রমণের বিশেষ কোনো চিকিৎসা না থাকায় ভাইরাস মারার ওষুধ ব্যবহার এবং রোগের উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা দিতে হয়। জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস শনাক্তের কোনো টেস্ট বের হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল গবেষণার প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু রোগী শনাক্ত করা হয়। তবে সুখবর হলো, সরকার এ রোগের ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আশা করি, পর্যায়ক্রমে জাপানিজ এনকেফালাইটিসের সব চিকিৎসাও শুরু হবে।

বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক সোসাইটি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, ২০১০ সালে ৬৬৬ জন রোগীর ওপর একটি গবেষণার পর তখনই রোগটি প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের জন্য আমরা সুপারিশ করি। আশার কথা, বিলম্বে হলেও সরকারি উদ্যোগে ভ্যাকসিনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা গত তিন বছর করোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, এই জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে করোনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী মারা যাচ্ছে। তাই এর জন্যও ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।

কর্মশালায় জানানো হয়, ১৮৭১ সালে প্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিস রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ১৯৭৭ সালে ময়মনসিংহের একটি গ্রামে রোগটি প্রথম শনাক্ত হয়। ওই সময় ২২ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭ জন মারা যান। ২০০৩ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইসিডিডিআরবি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এ রোগের প্রভাব, বিস্তার ও প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের ৮২টি সরকারি ও ২১টি বেসরকারি হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা চলছে। ৩৬টি জেলায় এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। সারা বছরই এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। তবে মে থেকে ডিসেম্বর মাসে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। আর তুলনামূলক গ্রামাঞ্চলে রোগটি বেশি ছড়ায় বলে জানান চিকিৎসক ও গবেষকরা।

গতকালের কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. সাইদুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ–সচিব মু. জসীম উদ্দিন খান, সাবেক লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক, আইসিডিডিআর বির প্রধান গবেষক ড. রেবেকা সুলতানা, বাংলাদেশ পেডিয়াড্রিক সোসাইটি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।