মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে জান্নাতুল ফেরদৌস (২২) নামে এক গৃহবধূর বসত ঘরে অবৈধভাবে মেলামেশা করতে এসে কাউসার (২১) নামে এক প্রেমিক যুবককে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার দিকে উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের মালপদিয়া গ্রামে ওই গৃহবধূর কুয়েত প্রবাসী স্বামী মোঃ সুমনের বসত ঘর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে ভুক্তভোগী সুমনের পরিবার ও স্থানীয়রা ইউপি সদস্য বক্কর খানের মাধ্যমে পরদিন শুক্রবার ভোরে আটক প্রেমিক যুবক ও অভিযুক্ত গৃহবধূকে মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দারস্থ করা হলে আইনি বি়ভিন্ন জটিলতার কারণে এবিষয়ে তিনি সমাধান দিতে না পেরে প্রেমিক যুগলকে সিরাজদিখান থানা পুলিশে হস্তান্তর করেন। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, টংগীবাড়ী উপজেলার আমতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে ইসলামী সরিয়ত মোতাবেক পার্শ্ববর্তী সিরাজিদখান উপজেলার মালপদিয়া গ্রামের মৃত ফরহাদের ছেলে সুমনের সাথে বিয়ে হয়। তাদের ওরশে একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। বিয়ের পর সুমন প্রবাশে কুয়েত চলে যায়। সে প্রবাসে থাকার সুবাদে তার তার স্ত্রী বিভিন্ন ছেলের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে। স্ত্রীর পরকীয়ায় জড়িয়ে পরার বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীর নিকট জানতে চাইলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যসহ শুরু হয়। সুমন তার স্ত্রীকে ফেরাতে না পারার কারণে বিষয়টি পারিবারিক কলহে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে সুমন বিষ পানে আত্নহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সে সময় সুমন ছুটিতে দেশে ছিলেন। এর কিছুদিন পর সুমন দেশ ত্যাগ করে কুয়েত চলে গেলে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পরকীয়ার সম্পর্ক চালিয়ে যায়। সুমন বিদেশে থাকাকালীন সময় তার স্ত্রী অজ্ঞাত এক ছেলের হাত ধরে শ্বশুর বাড়ি ত্যাগ করে। খোঁজ নিয়ে সুমনের পরিবারের লোকজন জানতে পারেন তাদের বৌ পিত্রালয়ে না গিয়ে অন্য কোন এক ছেলের সাথে অজানায় পাড়ি জমিয়েছে। পরে জান্নাতুল ফেরদৌসের এক খালুর অনুরোধে সাদা কাগজে লিখিত নিয়ে সুমনের স্ত্রীকে বাড়িতে তোলে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। এ ঘটনার মাসেক খানেকের মধ্যে পুনরায় একই ছেলের সাথে শ্বশুর বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস। দ্বিতীয় বার একই অপরাধ করে বাড়ির বৌ পালিয়ে গেলে সুমনের স্ত্রীকে বাড়িতে না তুলে তালাকের মনোস্থ করেন পরিবারের লোকজন৷ স্থানীয়, রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে কোলের ছেলের ভবিষ্যত ও সামাজিকতাসহ স্থানীয় লোকজনের তিরস্কারের পরোয়া না করে শেষ বারের মত জান্নাতুল ফেরদৌসকে তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে ঘরে তোলেন সুমনের পরিবার। শ্বশুর বাড়ী ফেরার পর জান্নাতুল ফেরদৌসের চলাচল ও আচারন স্বাভাবিক থাকলেও কিছুদিন পর থেকে পূর্বের চলাচল ও আচার আচরণ লক্ষ করে বাড়ির লোকজনসহ প্রতিবেশীরা তাকে চোখে চোখে রাখেন মর্মে ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে সুমনের প্রতিবেশী এক নারী সুমনের ঘরে একজন মানুষ ঢুকছে এমন মানুষের ছায়া দেখতে পেরে তার সন্দেহ হলে ওই নারী বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানান। পরে বাড়ীর লোকজন জান্নাতুল ফেরদৌসকে তার ঘরে দুয়ার খুলতে বলে ভিতর থেকে সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘন্টা খানেক চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে ইউপি সদস্য বক্কর খানকে ডেকে এনে প্রতিবেশী ও অণ্যান্য লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক দুয়ার খোলার চেষ্টা করলে ভিতর থেকে দুয়ার খুলে দেওয়া হয়।এসময় উপস্থিত লোকজন এক যুবককে খাটের উপর বসা দেখতে পান। এসময় ওই যুবককে জিজ্ঞেস করা হলে পরকীয়া প্রেমের টানে প্রেমিকা গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস আমন্ত্রণে তার বসত ঘরে প্রবেশের কথা স্বীকার করে। বিষয়টি ওইদিন রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ করিমকে মুঠোফোনে জানানো হয় এবং সকাল সাড়ে ১০ টায় পরিষদের হল রুমে উভয় পক্ষের লোকজন ডেকে সমাধানের চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান মোঃ করিম। এসময় পরকীয়া প্রেমিক ও প্রেমিকার ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ও বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে সমাধানে ব্যর্থ হয়ে পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
ভুক্তভোগী সুমনের মাতা মোসাঃ হাসিনা বেগম বলেন, পাশের বাড়ির একজন রাত ১১ টার দিকে সুমনের বৌএর ঘরে মানুষ ঢোকার ছায়া দেখে এসে বাড়িতে বলে। আমাদেরও সন্দেহ হলে দুয়ার খোলার জন্য চেষ্টা করি। দুয়ার না খোলায় পরে মেম্বারকে জানাই। উনি এসে লোকজন নিয়ে দুয়ার খুলতে গেলে ভিতর থেকে খুলে দেয়। পরে ওই ছেলেকে খাটে বসা পাই।
ভুক্তভোগী সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে কুয়েত থেকে বলেন, তার কোন চাওয়া পাওয়া অপুরন রাখিনি। সে এ নিয়ে কয়েকবার চলে গেছে। ছেলেটার কথা ভেবে সব মাফ করে বাড়িতে এনেছি। এবার আর আমি তাকে রাখবো না। মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ করিম বলেন, বিষয়টি জানার পর পরিষদে উভয় পক্ষকে ডাকানো হয়। উভয় পক্ষের বক্তব্যই শুনেছি। সে অনুসারে আমি সমাধান করতে পারি নি। তাই ওসি সাহেবেকে ফোন করে তাদের তুলে দিয়েছি। আইনি ভাবে যা হয় তাই হবে। সিরাজিখান থানার ওসি একেএম মিজানুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তারা এখন থানায় আছে। আইনগত ব্যাবস্থা প্রক্রিয়াধীন। আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়ার পর বাচ্চার বেপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।