জয়ন্ত সাহা যতন,স্টাফ রিপোর্টারঃ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দুই দিনব্যাপী সূর্য পূজা সমাপ্ত হয়েছে। সূর্য পূজাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ছট পূজা।
প্রতিবছর কালী পূজার পর শুকপক্ষে ষষ্টি তিথিতে নদীর তীরে সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে এই পূজা উদযাপন করা হয়। গত রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকাল হতে শুরু হয়ে সোমবার (৩১অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জের তিস্তা,ঘাঘট নদী সহ বিভিন্ন পুকুরে মনোবাসনা পূর্ণ- আপদ-বিপদ দূরীকরণসহ বিভিন্ন মানত পুরণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পূর্ণার্থীর সমাগম ঘটে এই সূর্য পূজায়।
সূর্য পূজার প্রথম দিন বিকালে পূজারীরা উপবাস থেকে ফুল, প্রসাদ, বাদ্য-বাজনাসহ বিভিন্ন পূজার সামগ্রী নিয়ে নদ নদী পুকুরের তীরে উপস্থিত হয়। সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পূণ্যার্থীরা নদীতে গোসল এবং কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে কুলায় সাজানো প্রসাদ নিয়ে পূজা শুরু করে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সকলেই বাড়িতে ফিরে যান। আবার পরের দিন অন্ধকার ভোরে নদীর তীরে উপস্থিত হয়। এরপর সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত থেকে একই নিয়মে পূজা শুরু করেন তারা। সূর্যোদয় হওয়ার পর সূর্যকে প্রণাম করে নদীতে স্নান এবং শরবত পানের মধ্যে দিয়ে শেষ করেন সূর্য (ছট) পূজা।
সূর্য পূজা করতে আসা জগনাথ প্রসাদ ও দীপিকা সাহা বলেন, আমরা সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতেই এই পূজা করে থাকি। প্রতিবছর এই ছট পূজা করতে আসি এই ঘাঘট নদীর তীরে। এছাড়াও সকলের শান্তি কামনায় এই পূজা করা হয়। সূর্য পূজা করতে আসা পূঁজারীরা বলেন, এই পূজার কখন উৎপত্তি হয়েছিল তার কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় না। কিন্তু কিছু পৌরাণিক আখ্যানে ছট পূজার নীতি নিয়মের সঙ্গে মিল থাকায় এ উৎসব দেখা যায়।পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি তথা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভের জন্য এটি পালন করা হয়। নারী-পুরুষ সমানভাবে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ছট পূজায় কোনো মূর্তি উপাসনার স্থান নেই। এতে ডুবিত এবং উদিত সূর্যকে পূজা করা হয়। পূজার দুদিন আগে লাউ ভাত এবং একদিন আগে খির ভাত খাওয়ার সঙ্গে ৩৬ ঘণ্টার এক কঠোর ব্রত পালন করতে হয়।
পূজায় সম্পূর্ণ সাত্বিক নৈবেদ্য ইত্যাদি কুলো, ডালা বা পানিতে রেখে উৎসর্গ করা হয়। বিভিন্ন ফল মূল, মিঠাই ইত্যাদির সঙ্গে পরস্পরাগত বিহারী লোকখাদ্য “ঠেকুয়া” প্রস্তুত করে নৈবেদ্য রূপে প্রদান করা হয়। এই সময় নুন-মশলা বর্জিত সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়। পূজার শেষে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের প্রসাদ বিতরণ এই পূজার অন্যতম নিয়ম।বর্তমানে এই পূজা এক সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। এই পুঁজার চারদিনের এই ব্রতের প্রথম দিনে ব্রতধারী বাড়িঘর পরিষ্কার করে স্নান সেরে শুদ্ধাচারে নিরামিষ ভোজন করেন। পরদিন থেকে উপবাস শুরু হয়; ব্রতী দিনভর নির্জলা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় পূজার শেষে ক্ষীরের ভোগ গ্রহণ করেন। তৃতীয় দিনে নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অন্যান্য ব্রতীদের সাথে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য অর্থাৎ দুধ অর্পণ করা হয়। ব্রতের শেষদিনে পুনরায় ঘাটে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে পবিত্র চিত্তে অর্ঘ্যপ্রদানের পর উপবাসভঙ্গ করে পূজার প্রসাদরূপে বাঁশ নির্মিত পাত্রে সুপ, গুড়, মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ঠেকুয়া, ভাতের নাড়– এবং আখ, কলা, মিষ্টি লেবু প্রভৃতি ফল জনসাধারণকে দেওয়া হয়।