মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে বরিশালের পরিবহন খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। ২৫ জুন সেতুটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হতে যাওয়ায় পূর্ব প্রস্তুতি স্বরুপ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধিতে চলছে বহুমুখী প্রচেষ্টা।বিশেষ করে সেতু উদ্বোধনের পর এই অঞ্চলের সড়ক পথে নতুন নতুন পরিবহন সংযোজন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এনিয়ে বরিশালের বাস মালিক সমিতির নেতাদের সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবহন কোম্পানি গুলো যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। এবং কোনো কোনো কোম্পানি বিলাস বহুল পরিবহন সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে সহযোগিতাও চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে বহুমুখী পদ্মা সেতুকে ভাবা হচ্ছে নতুন দিগন্ত। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এই সেতুর দ্বার উন্মোচনের মধ্যদিয়ে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী দেখছেন দিন বদলের স্বপ্ন।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,সেতু উদ্বোধনের পর বিলাস বহুল সার্ভিসে কম সময়ে বরিশাল টু ঢাকা যাতায়াতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামতে যাচ্ছে বাস পরিবহন। সেই সাথে সংযোজন হচ্ছে ১০০টির বেশি সাধারণ পরিবহন। এ সময় পরিবহন স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌছাতে সক্ষম এবং আরামদায়ক ও নিরাপদ হবে। ধাপে ধাপে কোম্পানি গুলো পরিবহনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করবে। তাছাড়া সরকার বরিশাল-ঢাকা বাস ভাড়া ৪২০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ায় যাত্রী সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে এমনটি আশা করা হচ্ছে।
স্বপ্নের সেতুকে ঘিরে বরিশাল-ঢাকা সড়ক পথে আমুল পরিবর্তন আসতে যাওয়ায় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা যেমন উচ্ছ্বাসিত, তেমনি ফেরিবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থায় উদ্বেলিত গোটা দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ।বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির একটি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু দিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য মে মাস থেকে ইলিশ পরিবহনের দুটি এসি বাস নামানো হয়েছে। সেতু উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত এগুলো মাওয়া পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। আগামী সপ্তাহে ইউনিক পরিবহন বরিশালে নিয়ে আসতে চলেছে তাদের বাস। সেতু উদ্বোধন হলেই এগুলো কুয়াকাটা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করবে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া গ্রিন লাইন পরিবহনও আবার যাত্রী সেবায় ফিরছে।
সাকুরা পরিবহনের পরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, এতদিন তাদের কোম্পানির ৭০টি বাস দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে যাতায়াত করত। সেতু চালু হলে এসি বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তখন এগুলো কম সময়ে সেতু দিয়ে যাত্রী পরিবহন করবে।
পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল বিভাগে প্রথমবারের মতো বাস চালু করবে শ্যামলী পরিবহন|শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এই বিভাগে আমাদের কোনো বাস চলাচল করে না। ফেরি পারাপারের কারণে কোম্পানি এতদিন বাস দেয়নি। সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের অন্তত ১৪টি রুটে আমাদের বাস দেওয়া হবে। বেশিরভাগই নন-এসি হলেও এগুলো বিলাসবহুল বাস। আমরা আশা করছি, তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীদের বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে পারব।
হানিফ পরিবহনের নথুল্লাবাদ কাউন্টার ম্যানেজার রানা তালুকদার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরপরই নতুন করে তাদের কোম্পানি আরও ১০টি বাস বরিশাল-ঢাকা সড়কপথে সংযোজন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৬টি এসি ও ৪টি নন-এসি বাস। তবে সবগুলো বাসই বিলাসবহুল এবং যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক হবে।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘সেতু চালুর আগে আমাদেরও প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। দফায় দফায় আমাদের আলোচনায় বসতে হচ্ছে। গত মাস থেকে ইলিশ পরিবহনের দুটি বাস চালু হয়েছে। ইউনিক পরিবহনও প্রস্তুত। গ্রিন লাইনও আবার বাস সার্ভিস চালু করবে। কয়েকদিন আগে শ্যামলী পরিবহন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। শুনেছি এনা পরিবহনও বরিশাল টু ঢাকা রুটে চলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তারা এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এছাড়া এখন যেসব কোম্পানির বাস চালু আছে তারাও সেতু চালু হলে পরিবহন বৃদ্ধি করবে। সেক্ষেত্রে অনুমান করা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে সব মিলিয়ে ৫০টি বিলাসবহুল এবং ১০০টি সাধারণ বাস চলবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটের বাসগুলোকে মানসম্মত করার প্রস্তুতি চলছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে যে তথ্য-উপাত্ত্ব পাওয়া গেছে- তাতে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে বরিশালের সড়কপথে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে এক ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আমুল পরিবর্তন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি স্বল্পসময়ে ঢাকা-বরিশাল যাতায়াতে সুযোগ তৈরি হওয়ায় জনগণের পক্ষ থেকে সাধুবাদ পাচ্ছে সরকার।
তবে সেতু উদ্বোধন পরবর্তী যে বিষয়টি এই অঞ্চলের মানুষকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে সেটি হচ্ছে সরু সড়কপথ। ফরিদপুরের ভাঙা টু বরিশাল অপ্রশস্ত সড়কপথ এই অঞ্চলের মানুষের আনন্দ ও নিরাপদ যাত্রা ম্লান করে দিতে পারে। সঙ্গত কারণে এই মহাসড়ক দ্রুত প্রশ্বস্ত করার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। সড়ক প্রশ্বস্তকরণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোর ইতিবাচক উদ্যোগ লক্ষ্যণীয় না হওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরাসহ বরিশালের ওয়াকিবহাল মহল।