কামরুজ্জামান শিমুল, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:
৯ ছেলেমেয়ে নিয়ে ১১ জনের ভাসমান পরিবারের অভিভাবক শেখ মোহাম্মদ ইনামুল (৪৫)। বর্তমানে বসবাস বাগেরহাট জেলা সদরের বারাকপুর বাজারে। নেই বাড়ি, নেই কোন কর্মসংস্থান তারপরেও শারীরিকভাবে সবাই সুস্থ, আছে ফুরফুরে মেজাজে। শুকনো খাবার চিড়ে খেয়ে দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছে এই পরিবারের। রাতে খোলা আকাশের নিচে সকলেই একসাথে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কায়িক পরিশ্রম করে আয় করার মত এনামুল ছাড়া আর কেউ নেই। সে’ও বউ বাচ্চা নিয়ে সারাদিন বাজারের এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে বউয়ের সাথে বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে ইনামুলকে। বাচ্চাগুলো বাবা-মায়ের পিছনে পিছনে ঘুরছে। তাদের নেই কোন চাহিদা। তবে অনেকেই সহানুভূতি দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকার খাবার দিয়ে তাদের সহায়তা করছে। অনেক নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করলে প্রত্যাখ্যান করছে তাদের সিদ্ধান্ত।
৯ বাচ্চার জনক ইনামুল এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সে বাগেরহাট জেলা সদরের পূর্ব সায়েড়া গ্রামের জোহর উদ্দিন শেখের ছেলে। তার বয়স যখন ৮/৯ বছর তখন সে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে চলে যায়। সেখান থেকে ২০ বছর আগে ফিরে এসে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ব্রি- চাকশ্রী গ্রামের গনি হাওলাদারের মেয়ে হালিমা বেগম (৩৫) কে বিয়ে করে এবং স্ত্রী সহ পুনরায় আন্দামানে চলে যায়। তারা সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে ওই দেশের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে থাকে। ২০ বছর সাংসারিক জীবনে এ পর্যন্ত তাদের ফাতেমা খাতুন (১৭), রহিম শেখ (১৪), কুলসুমা (১২), ইয়াসিন (১১), ইয়াসমিন (৯), আব্দুস সামাদ (৭) হুসাইন (৫), জান্নাত (৩), ও রমজান আলী (১৫ মাস) বয়সী ৯ টি সন্তান জীবিত রয়েছে। বড় সন্তান ফাতেমা খাতুন ঢাকার একটি বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করে। বাকি ৮ জনেই তার বাবা-মায়ের সাথে থাকে। গত ৬ বছর আগে সে দেশের সরকার তাদের আধার কার্ড, বাচ্চাদের বার্থ সার্টিফিকেট, মেডিকেল সার্টিফিকেট সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জ্বালিয়ে দিয়ে তার পুরো পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে তারা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে, হাটে বাজারে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করছে। বেশিরভাগ সময়ে শুকনো খাবার চিড়ে খেয়ে দিন চলে যায় তাদের। বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ষাট গম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট একখানা ঘরের জন্য আবেদন করলে তারা ঘর দিবে বলে আশ্বস্ত করেছে বলে জানিয়েছে সে। তবে কখন বা কোথায় দিবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত করেনি।
হালিমা বেগম বলেন, এদেশে আমাদের থাকার কোন জায়গা নেই, যাদের কাছে থেকেছি তারা কিছুদিন পরে তাড়িয়ে দেয়। রোদ ঝড় বৃষ্টিতে বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে থাকি। তাদের খাওয়া দাওয়া দিতে পারি না ঠিকমত। বাচ্চাদের মুখের দিকে চেয়ে ছেড়েও যেতে পারি না। এই মুহূর্তে আমাদের থাকার জন্য একটি ঘর খুব প্রয়োজন। সেই সাথে খাবারেরও দরকার আছে। সারাদিন পর রাতে শুকনো চিড়ে খেয়ে থাকতে হয়। ঘুম আসে না। বাচ্চাদের নিয়ে এভাবে আর চলতে পারছি না। আপনারা আমাদের থাকার একটা ব্যাবস্থা করে দেন।
স্থানীয় ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আখতারুজ্জামান বাচ্চু দৈনিক সংকালের কন্ঠকে বলেন, এই পরিবারটির ঘরের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর দেওয়া হতে পারে। তাছাড়া তাদেরকে একটি ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ এবং সরকারিভাবে অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
খাবারের সংকট জানতে পেরে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেভ দ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশন নামে একটি মানবিক সংগঠন। সংগঠনের বাগেরহাট জেলার উপদেষ্টা কোরিয়া প্রবাসী তৌফিক ইমনের পক্ষ থেকে সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে পরিবারটির হাতে চাল ডাল তেল আলু সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শিকদার ইমরান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কর্মী কামরুজ্জামান শিমুল, ফকির শরিফুল ইসলাম লিটু, মোহাম্মদ আখতার হোসেন, আক্কেল আলী, মিঠু শেখ, সুমন হাওলাদার, শাওন হাওলাদার সহ অনেকে।