শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল ১লা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সাধারণ মানুষের পাশে রেজা মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশন মোল্লাহাটে ২ কেজি  গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক রাউজানে যুবলীগের উদ‍্যোগে তীব্র তাপদাহে ফলমূল, শরবত ও ছাতা বিতরণ সাতক্ষীরায় কৃষকদের মাঝে উন্নত কৃষি যন্ত্র ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ সাতক্ষীরায় রাসায়নিক মিশ্রিত ১ ট্রাক আম বিনষ্ট বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোট সাতক্ষীরা সদর থানা কমিটি গঠন তীব্র তাপদাহে চারঘাট উপজেলার পাখা পল্লীতে বেড়েছে কর্মব্যস্ততা সাতক্ষীরা সদর রেজিস্ট্রি অফিসে জনসাধারণের মাঝে শরবত বিতরণ জিএমপি বাসব থানার বিশেষ অভিযানে, গাজীপুরে অপহরণের ২৯ দিন পর ৮ মাসের শিশু উদ্ধার অপহরণকারী গ্রেফতার

ঝালকাঠিতে কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় কমেছে পেয়ারার ফলন,দুশ্চিন্তায় চাষীরা 

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩
  • ৩৭৩ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

অন্য বছরের তুলনায় ঝালকাঠিতে এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।ফলে পেয়ারা গাছে ফুল এলেও তা ঝড়ে পড়েছে। এতে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কায় ভেঙে পড়েছেন পেয়ারা চাষীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কম বেশি সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পেয়ারার চাষ হলেও বরিশালের বানারিপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ।বরিশালের বানারিপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর,ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ থাকে।

এদিকে ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা,ভিমরুলী,শতদশকাঠি, খাজুরিয়া,ডুমুরিয়া,কাপুড়াকাঠি,জগদীশপুর,মীরকাঠি,শাখা গাছির,হিমানন্দকাঠি,আদাকাঠি,রামপুর,শিমুলেশ্বর এই গ্রাম গুলোর বৃহৎ অংশ জুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে।

তবে এবার গাছ গুলোতে দেরিতে ফুল এসেছে।কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় সেই ফুল অনেকটাই ঝড়ে পড়েছে।জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়েও পেয়ারা কুষিতেই আছে।এখনো বিক্রির উপযোগী হতে আরও মাস খানেক সময় লাগবে।তাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

স্থানীয় চাষীরা জানান,আনুমানিক ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হয়েছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ।এ আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। ২০২২ সালে অন্তত ১৯৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক পেয়ারার আবাদ হয়েছে।এ সময় ফলন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টন পেয়ারা।কিন্তু এ বছর ফলন কম হওয়ায় ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে পেয়ারা চাষীদের।

কৃষক পঙ্কজ বড়াল বলেন,মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের গোঁড়া পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করতে হয়েছে।এরপরে কাঁদা মাটি দিয়ে গোঁড়া ঢেকে দিয়েছি।তাতে প্রতিটা গাছের গোঁড়ায় গড়ে তিনশতাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে।পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তা অনেকটাই ঝড়ে পড়েছে।লাভ তো দূরের কথা,আসল খরচের টাকাই ওঠে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তার আছি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পঙ্কজ বলেন,সরকার কৃষকদের জন্য অনেক কিছুই দেয়।আমি একজন প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষক। সারাদিনই কৃষি নিয়ে পড়ে থাকি।তাই কারও কাছে যেতে না পারায় কৃষি সার ও বীজ কোনো কিছুই পাইনি।

কৃষক দেবব্রত হালদার বিটু বলেন,পেয়ারা আমাদের মৌসুমি আয়ের একমাত্র অবলম্বন।পেয়ারার ফলন ভালো হলে আমাদের সচ্ছলতা আসে।পানির ওপরই ভাসমান হাটে বছরে কোটি টাকার লেনদেন হয়।অস্থায়ী কিছু দোকান পাট বসে পাইকার,পর্যটক/দর্শনার্থীদের আপ্যায়নের বা ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যমে ব্যবসার করে আর্থিক ভাবে লাভবান হন বিক্রেতারা। কিন্তু পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় পাইকার আগমনসহ সবকিছুতেই এর একটা খারাপ প্রভাব পড়বে।

আরেক কৃষক বিপুল চক্রবর্তি বলেন,আমরা সংসারে তিনজন পুরুষ পেয়ারা বাগানের পরিচর্যাসহ সব ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকি।বছরের এ মৌসুমটায় আমাদের আয় দিয়ে সারা বছর সংসার চলে।এবছর যে ফলন হয়েছে তাতে মৌসুমের তিনমাসই সংসার চালানো দুঃসাধ্য হবে।বাকি সময়টাতে কীভাবে চলবো তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।

পর্যটন ব্যবসায়ী নিশিথ হালদার বলেন,পেয়ারা মৌসুমকে ঘিরে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক আসেন।আগে শুধুমাত্র নৌপথে আসতো,এখন সড়কপথ ভালো হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই যাতায়াত সম্ভব বলে পর্যটকদের সংখ্যা গতবছর থেকে বাড়ছে।পেয়ারাচাষিদের বাগানে ঢুকে ক্ষতিসাধন হওয়ায় আমরা পেয়ারা বাগানে নান্দনিক ভ্রমণের সুযোগ করেছি। কিন্তু এবছর যেভাবে পেয়ারার ফলন তাতে তেমন পর্যটক বা দর্শনার্থীরা আসবেন বলে মনে হয় না।কারণ পর্যটক বা দর্শনার্থীরা ফিরে যাওয়ার সময় কিছু পরিমাণ পেয়ারা নিয়ে যান।পেয়ারার ফলন কম হওয়ায় সবদিক থেকেই লোকসানের মুখে পড়বে এখানকার লোকজন।

পেয়ারা চাষী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভবেন হালদার বলেন,কৃষির ফলনে সবচেয়ে সুবিধাজনক হলো স্বাভাবিক মাত্রায় বৃষ্টি।কিন্তু এবছর পেয়ারা গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করা হলেও বৃষ্টি না থাকায় যে পরিমাণে ফুল এসেছিল তার বেশিরভাগই ঝড়ে পড়েছে। এখন পেয়ারা গাছে যে কুষি আছে তাতে খরচ পোষানোই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন,ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। পেয়ারা মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার অবলম্বন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফুল কিছুটা ঝড়ে গেছে। তবুও যা আছে তা ঠিকমতো টিকে থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনার সার ও বীজ সুষম বণ্টন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।